রেমিট্যান্সের উপর প্রণোদনা ঘোষণায় রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। গত বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের উপর প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেটে প্রণোদনা ঘোষণার পর ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের উপর প্রণোদনা বাবদ সরকারের এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গত ১ জুলাই থেকে রেমিট্যান্সের ওপর শতকরা ২ ভাগ হারে প্রণোদনা দেয়া চালু হয়েছে। এ নিয়মে বিদেশ থেকে কেউ ১০০ টাকা পাঠালে তাকে স্থানীয় ব্যাংক থেকে ১০২ টাকা পরিশোধ করছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে পরিশোধ করা অতিরিক্ত এই দুই টাকা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিশোধ করছে।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছর ১ জুলাই থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রণোদনা খাত থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংককে। সেই সময়ে এই ব্যাংকটির বিপরীতে প্রণোদনা খাতে পরিশোধ করা হয় ২৭১ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। মুসলিম প্রধান দেশগুলো থেকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে বলে তাদের দেয়া অর্থের পরিমাণও বেশি।
রেমিট্যান্সের উপর দেয়া প্রণোদনার সুযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা আছে, একজন প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রতিবার সর্বোচ্চ ১৫০০ শ’ মার্কিন /সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার (এক লাখ ৫০ হাজার টাকা) জন্য ২ শতাংশ হারে কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়। একজন প্রবাসী প্রতিবার ১৫০০ ডলার করে প্রতিদিন যত ইচ্ছে তত রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে পারবেন। এ জন্য তাকে শতকরা ২ ভাগ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংকগুলো বরাবর ২ ভাগ প্রণোদনা হিসেবে এক হাজার ৪২৭ কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার টাকা ছাড়া হয়েছে। বর্তমানে ১০২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
বলা হয়েছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৬২৮ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। অন্য দিকে, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে একই সময়ে (জুলাই-নভেম্বর) পর্যন্ত রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল ৭৭১ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ। এই হারে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই অবশিষ্ট অর্থ শেষ হয়ে যাবে। তাই চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হলে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অবশিষ্ট একহাজার ৫৩০ কোটি টাকার পুরোটাই ছাড় দিতে হবে।
জবাবে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, প্রণোদনার তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ একই সঙ্গে ছাড় দেয়া সম্ভব নয়। আপাতত তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় দেওয়ার জন্য অর্থ সচিবের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনা দেয়ার পরই প্রণোদনার তৃতীয় কিস্তির ৭৬৫ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রণোদনা দেয়ার কারণে দেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও আগে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। এখন বাজেটে যে পরিমাণ অর্থ এ খাতের জন্য রাখা হয়েছে তার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ এ বছরে লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত খাত থেকে অর্থের সংস্থান করা হবে। তবে পুরো বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।