পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারের চৌধুরীহাট সীমান্তে কাটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর মৃতদেহ আজো চোখে ভাসে মানুষের।
ভারতের সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ এর গুলিতে নির্মম সে হত্যাকাণ্ডের নবম বার্ষিকী আজ। দুঃখজনক সত্য এই নয়টি বছরেও বাংলাদেশের এই কিশোরিকে হত্যার বিচার হয়নি।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম প্রায় ১০ বছর ধরে দিল্লিতে ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গেই থাকতো কিশোরী ফেলানী। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে ফিরছিল সে। সীমান্ত পার হতে গিয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর। এতে ভয়ে সে চিৎকার করে। এসময় বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়।
ফেলানি নিহত হয়েছিল কনস্টেবল অমিয় ঘোষের গুলিতে। দীর্ঘক্ষণ তার দেহ বেড়ার ওপরেই ঝুলে ছিল। ফেলানীর বাবার চোখের সামনেই এই নির্মম কাণ্ড ঘটে।
কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের আদালত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়।
ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরোনো রায় বহাল রাখে। এ মামলায় দুই দফা কুচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। ন্যায় বিচারের জন্য আবারও ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেন তিনি।
মামলার আইন সহায়তাকারী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর দুটি রিট গ্রহণ করেন। একাধিকবার শুনানীর দিন ধার্য হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মামলাটি শুনানীর তালিকায় আনা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা আশা করতেই পারি দ্রুত শুনানীর মাধ্যমে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ফেলানী হত্যা মামলায় একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিবে, যেটা উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলকর হবে। দু দেশের সীমান্তে সহাবস্থান সু সংহত করতে ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত হওয়া জরুরী।’