দ্বিতীয় দফায় রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া এ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা রাজপথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে খালিশপুরের বিআইডিসি সড়ক, আটরা ও রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়কে শ্রমিকরা এ অনশন পালন করছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে— মজুরি কমিশন,পাটখাতে প্রয়াজনীয় অর্থ বরাদ্দ, মজুরি ও বেতন নিয়মিত পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ- ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নেতারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েও সেটা রক্ষা করতে পারেননি। তাই স্থগিত করা অনশন কর্মসূচি আবারও শুরু হয়েছে।’
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ-র সভাপতি শাহান শারমিন বলেন, ‘আমরা তাদের (নেতাদের) কথায় সম্মান জানিয়ে ঢাকা গিয়েছি, বৈঠক করেছি। কিন্তু আমাদের দাবির বিষয়ে কোনও সমাধান হয়নি। এই তীব্র শীতে কেন আমরা রাজপথে থাকবো।’ তিনি জানান, শ্রমিকদের ছয়টি সেক্টরের মধ্যে চারটি সেক্টর বাস্তবায়ন হয়েছে। পাট সেক্টর বাস্তবায়ন করতে এত গড়িমসি কেন? গত কয়েক বছর ধরে আমরা আশা করেও বারবার প্রতারিত হচ্ছি। আমারা রাস্তায় থাকত চাই না, উৎপাদন বাড়িয়ে মিলকে এগিয়ে নিতে চাই। গত কয়েক বছর পাটকলগুলোতে নামমাত্র পাট ক্রয় করা হচ্ছে। উৎপাদন একেবারে তলানিতে। কেন এমন হবে? আমরা শ্রমিক, আমাদের কাজ উৎপাদন দেওয়া। সেখান কোনও ফাঁকি আমরা দেই না। তাহলে আমাদের দোষ কোথায়। যেভাবে মিল চালালে লাভজনক হবে সেভাবে চালান। মজুরি ও বকেয়া আদায়ের জন্য আমাদের রাস্তায় নামতে হয় কেন?
কর্মসূচি চলাকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ও নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদর আহ্বায়ক হামিদ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন, সোহরাব হোসেন, সাহানা শারমিন,হুমায়ুন কবীর, শেখ ইব্রাহিম ও আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ সমাবেশে বক্তৃতা করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর ১১ দফা দাবিতে ছয় দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ১০ ডিসেম্বর শুরু হয় আমরণ অনশন। অনশনের চতুর্থ দিন গত ১৩ ডিসেম্বর মিল এলাকায় ছিল উত্তাপ আর তীব্র উত্তেজনা। অনশনে অসুস্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মারা যান শ্রমিক আব্দুস সাত্তার।১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় প্লটিনাম জুট মিল গেটে বিআইডিসি সড়কে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমরন অনশনের চারদিনে ২ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হন। ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর নেতারা শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ওই দিন গভীর রাতে তিন দিনের জন্য অনশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ গত ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাটকলের সিবিএ ও নন সিবিএ শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক হয়। তৃতীয় দফার এই বৈঠক থেকে বের হয়ে শ্রমিক নেতারা জানান, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের ব্যাপারে শ্রম প্রতিমন্ত্রী আরও একমাস সময় চেয়েছেন। কিন্তু ওই একমাস পর আসলেই মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হবে কিনা তা অনিশ্চিত। শুধু শুধু সময়ক্ষেপণের জন্য একমাসের কথা বলা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন শ্রমিক নেতারা। এরপর আজ পুনরায় তারা অনশন শুরু করেন।