শীতকালে কিছু রোগের ঝুঁকি বেশি। এসময় আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা উপরিস্থ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ভোগার প্রবণতা বেড়ে যায়।
উপরিস্থ শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে আপনার নাক, গলা, গলবিল, স্বরযন্ত্র ও শ্বাসনালী অন্তর্ভুক্ত। শরীরের এ অংশে সংক্রমণ হলে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ চিকিৎসা না করলে বা লাইফস্টাইলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন না আনলে আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন থেকে লোয়ার রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা নিম্নস্থ শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে আপনার ফুসফুস ঝুঁকিতে থাকবে, অর্থাৎ নিউমোনিয়া বা ফুসফুসে প্রদাহ হতে পারে।
কিছু লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে পারেন যে আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন থেকে নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। এখানে লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো।
জ্বর: আনকমন হলেও আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশনে নিম্নমাত্রার জ্বর আসা সম্ভব। এ জ্বর ১০১ ডিগ্রি অথবা এর উপরে ওঠলে ভালো সম্ভাবনা থাকে যে আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশনটি নিউমোনিয়াতে রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে জ্বরের সঙ্গে কাশি থাকলে, বলেন নিউ ইয়র্কের ইয়াঙ্কারসে অবস্থিত ওয়েস্টমেড মেডিক্যাল গ্রুপের ফ্যামিলি মেডিসিন ফিজিশিয়ান নিকোলাস প্যান্টালিও।
দ্রুত হার্ট রেট: যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার হৃদস্পন্দন সচরাচরের চেয়ে দ্রুত হচ্ছে, তাহলে হার্ট রেট চেকের জন্য সময় দিন। প্রতিমিনিটে ১০০ এর ওপরে বিট হলে তাকে দ্রুত হার্ট রেট বিবেচনা করা হয়। ডা. প্যান্টালিও বলেন, ‘সাধারণত রোগীরা শ্বাসকষ্টে ভুগেন এবং এমনকি কখনো কখনো বুকব্যথার অভিজ্ঞতাও হয়।’ এসব উপসর্গ লেগে থাকলে মেডিক্যাল সেবার খোঁজ করুন।
বুক ব্যথা: আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়লে বুকে টানটান অনুভব করা ও ব্যথা হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। দ্য আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নিউমোনিয়ার অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে বুকে তীক্ষ্ণ ব্যথা। কাশি দিলে অথবা গভীর শ্বাস নিলে এ ব্যথা আরো তীব্র হয়ে থাকে।
ভেজা কাশি: আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশনে প্রতিনিয়ত কাশি একটি কমন ঘটনা। শেষপর্যন্ত এ কাশি প্রোডাক্টিভ কফ বা ওয়েট কফ বা ভেজা কাশিতে রূপ নিতে পারে- এর মানে হলো, কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা বের হবে। ডা. প্যান্টালিও বলেন, ‘সাধারণত নিউমোনিয়াতে কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা বের হয় ও জ্বর আসে।’ তাই আপনার কাশি শ্লেষ্মা বের করে আনলে এবং এ উপসর্গ কিছুদিনের মধ্যে চলে না গেলে আপনার সম্ভবত নিউমোনিয়া হয়েছে।
লাল শ্লেষ্মা: আপনার কাশির সঙ্গে বের হয়ে আসা শ্লেষ্মার রঙ রক্ত বা জংয়ের মতো হলে এটা একটি লক্ষণ হতে পারে যে ফুসফুসের গভীর থেকে এ শ্লেষ্মা আসছে, যা নিউমোনিয়ার মতো লোয়ার রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা নিম্নস্থ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের নির্দেশক হতে পারে। আপনার চিকিৎসককে এ পরিবর্তনের বিষয়ে জানাতে হবে, কারণ এক্ষেত্রে ভিন্ন কোর্সের চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
ঠান্ডা অনুভূতি: প্রায়শ নিউমোনিয়ার রোগীরা শরীরে ঠান্ডা অনুভবের কথা জানান, যা দূর করতে তারা ব্যর্থ হন। শরীরে ঠান্ডার অনুভূতি হচ্ছে জ্বরের একটি লক্ষণ- এসময় শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ওভারটাইম কাজ করে। শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হলে এটা একটি লক্ষণ হতে পারে যে আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন থেকে নিউমোনিয়া হয়েছে।
শ্বাসকর্মে কাঠিন্যতা: কিছুদিন ধরে ঠান্ডা বা আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশনে ভোগার পর শ্বাস নিতে কষ্ট হলে এটা নিউমোনিয়ার সতর্কীকরণ লক্ষণ হতে পারে। এটা এমনই মারাত্মক উপসর্গ যে ফুসফুস খুলতে ব্রিদিং ট্রিটমেন্ট হিসেবে নেবুলাইজার প্রয়োজন হতে পারে। মাথা হালকা হয়ে যাওয়া বা মস্তিষ্কের দুর্বলতা বা চেতনা হারানোর মতো অক্সিজেন ঘাটতি জনিত সমস্যা অথবা রক্তপ্রবাহে সমস্যা এড়াতে কালবিলম্ব না করে আপনার ফিজিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলুন।