দোকানিরা জানান, ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটগুলোতে সোয়েটার, উলের পোশাক, বেস্নজার, ট্রাউজার, জ্যাকেট, চাদর, মাপলার, কানটুপিসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্রের দাম এখন তুলনামূলক বেশি। শীতের শুরুতে যে দাম ছিল এখন কোনো কোনো পোশাকের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে শীতের পোশাকের দাম ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
নিউমার্কেটের মায়ের দোয়া ফ্যাশন হাউসের মালিক জুবায়ের আল হাসান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শীতের পোশাক ভালো বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নানা ধরনের শীতে পোশাক এনেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও ভিড় করছেন তাদের পছন্দের পোশাক কিনতে। তাই বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। দামের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীতের সময়ই কেবল শীত পোশাকের বিক্রি হয়, তাই ব্যবসায়ীরা একটু লাভে বিক্রি করছেন। তবে দাম সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত কম দামে বিভিন্ন ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যাচ্ছে নগরীর ফুটপাতে। মার্কেটের তুলনায় দাম কম হওয়ায় নিম্ন আর মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই ভিড় করছেন ফুটপাতে। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ফার্মগেট, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররমসহ বঙ্গবাজার, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, ঢাকা কলেজের সামনে, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে, মিরপুর ১০-এ শাহ আলী মার্কেট, এবং পলস্নবীর পূরবি সুপার মার্কেটের ফুটপাতে সব ধরনের শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে উলের সোয়েটারের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। মানভেদে জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এসব মার্কেটে দেশীয় তৈরি চাদর ৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা, উলের সোয়েটার ২০০ থেকে ২৫০০ টাকা, এবং কার্ডিগান (মেয়েদের পোশাক) পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৩
১৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং শীতের ক্যাপের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন মার্কেটে চাইনিজ বেস্নজার ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকায়, চামড়ার জ্যাকেট ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকায়, লম্বা স্স্নিভের টি-শার্ট ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়, উলেন কম্বল ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, এসব পোশাকের দাম গত বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।
জানা গেছে, ফুটপাতে যেসব পুরনো কাপড় বিক্রি হয়, তার একটি বড় অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিশেষ করে শীতের গরম পোশাক, কম্বল, ট্রাউজার ইত্যাদি প্রতি বছরই আমদানি করেন আমদানিকারকরা। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে পুরনো কাপড় আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। আমদানিকারকরা কম্বল, সোয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, পুরুষের ট্রাউজার, সিনথেটিক কাপড়ের শার্ট আমদানি করেন।
বঙ্গবাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চায়নার বিভিন্ন ধরনের শাল ও চাদর বিক্রি করছেন ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। দেশি ভালো মানের দাম ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। উলের তৈরি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। কাপড়ের জুতা ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। জ্যাকেট ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।
বঙ্গবাজারে আল-কাস গার্মেন্টের মালিক আলম বলেন, শীত বাড়ায় কেনাবেচাও বাড়ছে। সারা দিনই খুচরা বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকেও পাইকাররা আসছেন। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীতের পোশাক সারা বছর বিক্রি হয় না। এ সময় চাহিদা বেশি থাকায় দাম একটু বেশি।
নিউমার্কেটের দ্বিতীয়তলায় ও গাউছিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে মেয়েদের হরেক রকমের কার্ডিগান, সোয়েটার ও গ্যাবার্ডিনের লং জ্যাকেট। প্রতিটি সোয়েটারের দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। মেয়েদের কাছে গ্যাবার্ডিনের লং জ্যাকেটের চাহিদা বেশ ভালো বলে জানান কালারস ফ্যাশনের পারভেজ আমিন।
তবে ক্রেতারা বলছেন, এই বছর নতুন শীতের পোশাকের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।
মৌচাক মার্কেটের ফুটপাথ থেকে গরমের কাপড় কিনছিলেন রিকশা চালক হাসিবুর রহমান। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট থেকে পোশাক কেনার সামার্থ্য তার নেই। এ জন্য তিনি ফুটপাত থেকে কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তিনি বলেন, তার মতো যে সব লোক বিভিন্ন শপিংমল থেকে নতুন পোশাক কিনতে পারেন না, তারা সস্তা দামে ফুটপাত থেকে গরম পোশাক কিনে নেন। তবে গত বছরের চেয়ে বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে শীতের পোশাক কিনছেন শ্রমিক আবু আলী। তিনি বলেন ‘বিভিন্ন শপিংমল দাম বেশি হওয়ায় শীতের পোশাক কিনতে পারছিলেন না। ফুটপাত হল একমাত্র জায়গা, যেখানে কম দামে পছন্দের পোশাক কিনতে পারেন। তিনি বলেন, গার্মেন্টের রিজেক্ট পোশাক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ এখান থেকে কম দামে কিনতে পারেন।
গুলিস্তানের হকার আনিসুল হক বলেন, তারা মূলত সোয়েটার বিক্রি করে থাকেন। যা পোশাক কারখানা থেকে থেকে রিজেক্ট হয়ে আসে। বেশিরভাগ সময় নিম্ন আয়ের মানুষেরা এসব পোশাকের ক্রেতা হয়ে থাকেন বলে জানান তিনি।
বঙ্গবাজারে আরেক হকার গফর মিয়া বলেন, এবার শীতের পোশাকের দাম বেশি। পোশাকের কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায় তাদেরর বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া পণ্য পরিবহনের ব্যয় গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই তাদের দাম বাড়াতে হয়েছে।
গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের জিয়াড ফ্যাশনের মালিক আশরাফুল আলম বলেন, তিনি কম্বল ব্যবসায়ের সঙ্গে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত। চীন, কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো বিভিন্ন দেশ থেকে কম্বল আমদানি করেন তিনি। তবে দেশীয় কম্বলও পাওয়া যায়। তবে তাদের কম্বলের মূল ক্রেতা কম আয়ের মানুষ।