মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য হিসেবে ৯৯ কোটি ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সার চেক পেয়েছেন বাংলাদেশ ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডের মালিক মাকসুদুল আলম।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে সরকার এ চেক হস্তান্তর করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। সঙ্গে ছিলেন সাইফুল্লাহ মামুন।
এখন পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের জমি যেকোনো সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে।
আদালত থেকে বেরিয়ে আজমালুল হোসেন কিউসি সাংবাদিকদের বলেন, এ লড়াইটা শুরু হয়েছে ১৯৭২ সালে। উনি (মুন সিনেমা হলের মালিক) তিনটা রিট করেছেন। তৃতীয় রিট পিটিশনে ২০০৫ সালে শুনানি হয়েছিল হাইকোর্ট ডিভিশনে। তারপর আপিল বিভাগে ২০১০ এ। তারপর আদালত অবমাননার মামলা করেছিল ২০১৩ সালে। যেটার ফল আজকে আমরা পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট যে টাকাটা দেওয়ার কথা ছিল সেটা দিয়েছে। তারপরও কাজ শেষ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট যেন এ জমিটার মালিক হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। এটা আজ-কালকে অথবা অন্য একদিন রেজিস্ট্রেশন করতে। এটা আমাদের করতে হবে। টাকাটা এখন খরচ করতে পারবেন। তবে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিতে হবে। জানুয়ারির মাসের ৫ তারিখ ফাইনাল অর্ডারের জন্য তারিখ রেখেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মাকসুদুল আলম জানান, আমার তো ডিমান্ড ছিল অনেক। আমি পাইলাম অনেক কম। মাত্র ৯৯ কোটি টাকা পেলাম।
তার পরিবার ও ঢাকায় অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাকসুদুল আলম বলেন, আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। তারা বিদেশে থাকে। আমি আর আমার ওয়াইফ দেশে থাকি। আমি গুলশানের বানানী থাকি।
ইতালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ছিলেন মুন সিনেমা হলের মালিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্পত্তিটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে মালিকানা দাবি করে মাকসুদুল আলম আদালতের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টে রায় পক্ষে যাওয়ার পর আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে তা বহাল রাখেন। একই সঙ্গে ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার মুন সিনেমা হল মূল মালিককে ফেরতের নির্দেশ দেন। কিন্তু ইতালিয়ান মার্বেলস ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুন সিনেমা হলের মালিক মাকসুদুল আলম তার জমি না পেয়ে ২০১২ সালে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, মুন সিনেমা হল আগের অবস্থায় ফেরত দেওয়ার কোনো উপায় নেই। এখন মুন সিনেমা হলের জমির মূল্য ও মুন সিনেমা হলের মূল স্ট্রাকচারের (কাঠামো) মূল্য ধরে এর মালিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এরপর ২০১৭ সালে আদালত মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেন।
সে অনুসারে মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পরে আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি এক আদেশে ক্ষতিপূরণসহ ভবন ও জমির মূল্য বাবদ ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেন। ওই বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এ টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করতে বলা হয়। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার ২ মাসের মধ্যে ২৫ কোটি, এর দুই মাসের মধ্যে আরো ২৫ কোটি এবং বাকি টাকা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আরও সময় চায় রাষ্ট্রপক্ষ।