মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকার তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নাম ওঠায় নানা মহলে চলছে সমালোচনা। অবশ্য তালিকায় তার নাম লেখা হয়েছে মো. গোলাম আরিফ, অ্যাডভোকেট। নামের শেষাংশে নেই ‘টিপু’। নেই বাবার নামও।
তালিকায় গোলাম আরিফের সঙ্গে আরও দুজন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নাম উঠেছে বলে দাবি পেরিবারসহ বিভিন্নজনের। অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেছেন, রাজাকার তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম উঠেছে, আবার বাদ পড়েছে অনেক চিহ্নিত রাজাকারের নাম।
এ ঘটনায় ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করে অনেকে তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
আর তালিকায় নিজের ও অন্য দুই আইনজীবীর নাম দেখে বিস্মিত হয়েছেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য গোলাম আরিফ টিপু ২০১৯ সালে একুশে পদক পান।
আর ১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় যে কলামে প্রধান প্রসিকিউটরের নাম এসেছে, সেখানে তার সঙ্গে থাকা অন্য চারজনের মধ্যে দুজন আইনজীবী এবং ত’কালীন রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও একজন মহকুমা পুলিশ সুপারের নাম রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তাতে রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের ১৫৪টি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ৮৯ নম্বর তালিকার ৬০০ ক্রমিক নম্বরে গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম রয়েছে। এই ছকের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে- তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল।
অন্য চারজন হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব।
অ্যাডভোকেট মহসিন আলী ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তালিকায় এই দুজনের নাম দেখেও অবাক গোলাম আরিফ টিপু।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত, বিস্মিত। এ ধরনের কিছু কী করে ঘটে! রাজশাহীতে গোলাম আরিফ নামে আর কোনো অ্যাডভোকেট আছে কি? অ্যাডভোকেট মহসীন, অ্যাডভোকেট সালামের নাম দেখেও আমি বিস্মিত।’
গোলাম আরিফ টিপুর নাম তালিকায় থাকার কথা জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি তালিকাটি এখনো দেখি নাই। কাজেই কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
গোলাম আরিফ টিপু একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পান ২০১০ সালে । এখনো তিনি ওই দায়িত্ব পালন করছেন।