মাদক নিয়ন্ত্রণে কড়া অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া গেলেও তা অপ্রতুল। তবে মাদক কারবারি বা সেবনকারীরা বসে নেই। তাদের নজর পড়েছে পাড়া-মহল্লার ফার্মেসিগুলোতে। টাপেন্টা নামের ব্যথানাশক ও ঘুমের ওষুধকে মাদকদ্রব্য হিসেবে গ্রহণ করে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকছেন মাদকসেবীরা। এমন তথ্য পেয়ে দেশব্যাপী ওষুধের দোকানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়ছে।
এ বিষয়ে রোববার বিকেলে কথা হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফার্মেসিগুলোতে মাদক, বিশেষ করে টাপেন্টা ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে অভিযান চালানো হচ্ছে। মূলত এসব দোকান থেকে ও ব্যথানাশক ও ঘুমের ওষুধ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নেশাদ্রব্য হিসেবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বেশ কয়েকটি ফার্মেসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নজরদারি করা হচ্ছ ফার্মেসিগুলোতে।’
প্রায় দুই বছর ধরে টাপেন্টা ব্যবহার করছেন, এমন এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া এখন বেশ কঠিন। দামও বেশি। তাই নেশার জন্য ঘুমের ও ব্যথার ট্যাবলেট ব্যবহার করছি। এটি কিনতে ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন লাগে না। বাজারমূল্য থেকে একটু বেশি দিলেই সহজেই এসব মিলে যায়। আমার মতো অনেকেই এখন এ নেশায় চলে এসেছে। ফেনসিডিল কিংবা ইয়াবা সেবনের পর যে ভাব আসে, সে রকমই ভাব পাওয়া যায় এসব ওষুধ খেলে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব ব্যথানাশক ও ঘুমের ট্যাবলেট ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে মাদক তৈরি করা হচ্ছে। এসব সস্তায় ও সহজে মিলছে। কলেজ ও স্কুলের ছাত্ররা এসব মাদক সহজেই কিনে সেবন করছে। টাপেন্টা ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির ব্যথানাশক ও ঘুমের ট্যাবলেট ও সিরাপ ব্যবহার হচ্ছে মাদক হিসেবে। এসব ট্যাবলেট ও সিরাপ মিশিয়ে ‘ঝাটকা’, ‘ফুটুস’ ও ‘ভুলাদানা’ নামে মাদক তৈরি হচ্ছে। বেশি দাম দিলে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ট্যাবলেট ফার্মেসির লোকরা বিক্রি করছেন। একটি ট্যাবলেটের সাধারণ মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকা হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। আবার রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টেও হরহামেশা ব্যবহার হচ্ছে এসব মাদক। হাতের নাগালে মাদক চলে আসায় সেবনকারীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এসব মাদকদ্রব্যের ক্রেতাদের মধ্যে আছে রিকশাচালক, সিএনজি অটোরিকশাচালকসহ অন্য পেশার লোকরাও।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকার প্রতিটিতে গড়ে শতাধিক ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান আছে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি দোকানগুলো খোলা থাকে। এসব দোকানে সবাই ওষুধ কিনতে যায়। এ কারণে ফর্মেসিগুলোতে তেমন নজরদারি করা হয় না। মাদকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় দোকানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সজল ব্যানার্জি বলেন, ‘কোনো সুস্থ মানুষের জন্য এসব ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। যারা নিয়মিত ব্যবহার করে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সবসময় দুর্বল ও ঝিমুনি লাগে। স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এছাড়া, হার্টসহ অন্যান্য অঙ্গের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এগুলো ব্যথানাশক বা ঘুমের কাজ করে। এ ধরনের ওষুধ অতিমাত্রায় ব্যবহার করলে অতি সহজেই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে।’