২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৭

রাজউক কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিশাপে পুড়ছেন তারা

কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। চিরন্তন সত্য প্রবাদটি পুরোপুরি সত্য হলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরিবারের ক্ষেত্রে।

পরিবারের প্রধান নজরুল ইসলামের দুর্নীতির অভিশাপের শিকার হলেন স্ত্রী ও ছেলে। নিজে কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়েও শুধু অবৈধ সম্পদের কারণে দুর্নীতির মামলার আসামি হতে হলো মা ও ছেলেকে। হয়ত সাজাও ভোগ করতে হতে পারে তাদের।

নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পদকে বৈধ করতে কৌশলে নিজের ছেলে ও স্ত্রীকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মিলেনি পাপ থেকে মুক্তি।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নজরুল ইসলামের নামে অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায়নি। তবে তার পরিবারের বাকি দুই সদস্যের নামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। যার কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি তিনি।

ছেলে সৈয়দ তরিকুল ইসলামের নামে প্রায় ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও স্ত্রীর নামে ৬৬ লাখ টাকার হিসাব বহিভূর্ত সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। যদিও বাজার মূল্যে ওই সম্পদে মূল্য হবে কয়েক কোটি টাকা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাজউকে পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার ছেলে সৈয়দ তরিকুল ইসলামের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ছেলের নামে প্রায় ৪৩ লাখ টাকার সম্পদ করে নিজে আসামি হওয়ার পাশাপাশি সন্তানকেও আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নজরুল ইসলাম ছেলে তরিকুল ইসলামের নামে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৫১ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪২ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৯ টাকার অবৈধ সম্পদ করেছেন। এ ছাড়া তরিকুলের নামে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী ১০ লাখ টাকার প্রাইজবন্ডের তথ্য পেয়েছে দুদক। আরো সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ৫ কাঠা জমি ও পূর্বাচল নতুন প্রকল্পে সাড়ে ৭ কাঠার প্লট। যার বৈধ কোনো উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে তরিকুল ইসলাম। তিনি মিথ্যা তথ‌্য দিয়েছেন বলে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। সন্তানের নামে করা সম্পদের বৈধতার জন্য তরিকুল ইসলামের দুই মামার নাম ব্যবহার করেছেন নজরুল ইসলাম।

এ সকল অভিযোগে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এজাহার দাখিল করেছে দুদক।

একইভাবে নজরুল ইসলাম তার স্ত্রী মিসেস তাহমিনা বেগমের নামে ৬৬ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। সম্পদের মধ্যে রয়েছে উত্তরায় প্রায় ১৯ লাখ টাকার বাড়ি, বেইলি রোডের প্রায় ২৯ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, বাউনিয়ায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার জমি ও রাজধানীর  খিলগাঁয়ে ফ্ল্যাট নির্মাণ। বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে এসব সম্পদের দাম কয়েক কোটি টাকা।

এ ছাড়া অনুসন্ধানে মিসেস তাহমিনা বেগম তার সম্পদ বিবরণীতে ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি ক্রয়ের তথ্য গোপন করেছেন বলে দুদকের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। এতো সম্পদের মালিক যিনি সেই তাহমিনা বেগম একজন গৃহিণী। তার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস নেই। এই সব সম্পদ প্রকৃত অর্থে তার স্বামী সৈয়দ নজরুল ইসলামের।

এসব অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল হুদা বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। যেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম উভয় মামলার আসামি।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১১, ২০১৯ ২:৩১ অপরাহ্ণ