২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৩৮

নিবন্ধন ছাড়া ওড়ানো যাবে না ‘ড্রোন’

আইনের আওতায় আসছে ‘ড্রোন’। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারনে নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন উড়ানো যাবে না। ড্রোন চালাতে হলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছ থেকে নিবন্ধন করতে হবে।

বেবিচকের কাছে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলেই ড্রোন উড়ানো যাবে। নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন উড়ালে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে।

খুব শিগগির এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ড্রোন নিবন্ধনের জন্য বেবিচককে দিতে হবে বিভিন্ন তথ্য। অনুমতি দেয়ার পর ড্রোন মালিককে দেয়া হবে একটি বিশেষ স্টিকার। এই স্টিকার আবার ড্রোনের গায়ে দৃষ্টিগোচর স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে। কেউ নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন উড়ালে সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে পুলিশকে।

নিবন্ধন ছাড়া ড্রোন ওড়ানো ও এর দ্বারা কারো ক্ষতি হলে উড্ডয়নকারীকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। একই সঙ্গে গুনতে হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ১৫ কেজির বেশি ওজনের ড্রোন আমদানি করতে হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।

সূত্র জানায়, এসব বিধান রেখে প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯’। এ নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এর ওপর মতামত দেয়ার জন্য তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

নীতিমালার খসড়ার ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত কাজে ড্রোনের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা/নিরাপত্তা ভঙ্গ এবং জনসাধারণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির মতো অনৈতিক, বেআইনি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে বর্তমানে বাংলাদেশে এর আমদানি, ব্যবহার ও উড্ডয়ন অত্যন্ত সীমিত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।’

‘অপর দিকে মানব কল্যাণ ও রাষ্ট্রীয় বহুবিধ উন্নয়ন/নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের প্রয়োজনে আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিক্যাল/আনম্যান্ড এয়ারক্রাফট সিস্টেম/রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফট সিস্টেম/ড্রোনের আমদানি, ব্যবহার ও উড্ডয়নের সুনিয়ন্ত্রিত অনুমোদন প্রদান এখন সময়ের চাহিদা। এ জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।’

নীতিমালায় ১৭টি ধারা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ড্রোন উড্ডয়নের অনুমতি প্রদানের সুবিধার্থে চারটি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। এগুলো হলো- ক. বিনোদনের জন্য ব্যবহার, খ. শিক্ষা ও গবেষণার মত অ-বাণিজ্যিক কাজে সরকারি/বেসরকারি সংস্থার ব্যবহার, গ. সার্ভে, স্থির চিত্র, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভ্যাব্যতা যাচাই ইত্যাদি বাণিজ্যিক পেশাদার কাজে ব্যবহার ও ঘ. রাষ্ট্রীয়/সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার।

ড্রোন উড্ডয়ন বা পরিচালনার জন্য তিনটি জোনে বিভক্ত করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এই জোনগুলো হচ্ছে গ্রিন জোন, ইয়োলো জোন ও রেড জোন। গ্রিন জোনের (কোনো প্রকার অনুমতির প্রয়োজন হবে না) পরিধি হবে বিমানবন্দর/কেপিআইয়ের তিন কিলোমিটার বাইরে এবং ৫০ ফুটের অধিক উচ্চতায় নয়, বিমানবন্দর/কেপিআইয়ের পাঁচ কিলোমিটার বাইরে এবং ১০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় নয় এবং বিমানবন্দর/কেপিআইয়ের ১০ কিলোমিটার বাইরে এবং ২০০ ফুটের অধিক উচ্চতায় নয়।

ইয়োলো জোন (অনুমতিসাপেক্ষে ব্যবহার) নিয়ন্ত্রিত এলাকা, সামরিক এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। রেড জোন (বিশেষ অনুমতিসাপেক্ষে পরিচালনা) নিষিদ্ধ, বিপজ্জনক. বিমানবন্দর, কেপিআই এলাকা।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব শ্রেণির ড্রোন উড্ডয়নের সাধারণ ও বিশেষ শর্তাবলী বেবিচক নির্ধারণ করবে। বেবিচকের বিশেষ অনুমতি ব্যতীত বেসামরিক ড্রোন রাতে (সূর্য অস্ত ও উদয়ের মধ্যবর্তী সময়ে) পরিচালনা করা যাবে না।

ড্রোন উড্ডয়ন/পরিচালনার বিষয়টি সরকারি/বেসরকারি সম্পত্তি, ব্যক্তি/রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি কিংবা ক্ষতির কারণ হতে পারবে না। ড্রোন উড্ডয়নের ক্ষেত্রে অপারেটরের যোগ্যতা এবং অনুসরণীয় নির্দেশনাগুলো বেবিচক নির্ধারণ করবে।

কোনো খোলা স্থানে যেকোনো শ্রেণীর ড্রোন উড্ডয়নের আগে ওই এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভিভিআইপি মুভমেন্ট রয়েছে কি না- এ বিষয়টি অপারেটরকে নিজ দায়িত্বে জেনে নিতে হবে এবং ভিভিআইপি মুভমেন্টের তারিখের এক ঘণ্টা আগে থেকে ভিভিআইপি মুভমেন্ট সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ রাখতে হবে।

তবে বিশেষ প্রয়োজনে এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন/এসএসএফ’র সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রোন উড্ডয়ন করা যেতে পারে।

ড্রোন উড্ডয়নকালে বেবিচক প্রদত্ত অনুমোদনের কপি এবং যে মোবাইল সিমের মাধ্যমে ড্রোনটি নিবন্ধন করা হয়েছে সেটি ড্রোন অপারেটর সার্বক্ষণিকভাবে নিজের সাথে রাখতে হবে এবং বেবিচক, পুলিশ/র‌্যাব ও অন্যান্য সরকারি নিরাপত্তা/গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রদর্শন বাধ্য থাকবে।

অননুমোদিতভাবে ড্রোন উড্ডয়নের শাস্তির বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে- বেবিচক, পুলিশ, র‌্যাব এবং সরকারি নিরাপত্তা/গোয়েন্দা সংস্থার নিকট এলাকায় এই নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে, কিংবা বেবিচকের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে ড্রোন উড্ডয়ন করা হচ্ছে মর্মে প্রতীয়মান হলে পুলিশ স্ব-উদ্যোগে অথবা পুলিশের সহায়তায় বেবিচক ও সরকারি নিরাপত্তা/গোয়েন্দা সংস্থা ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধসহ উড্ডয়কারীকে সঙ্গে সঙ্গে  আটক করতে পারবে। দেশের প্রচলিত আইনে তারা শাস্তিযোগ্য হবেন।

ড্রোন উড্ডয়নের কারণে জনসাধারণ ও প্রাণীর জীবন, জনসাধারণের সম্পত্তি ও গোপনীয়তা এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে দেশের প্রচলিত আইনে দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান বিচারযোগ্য এবং দণ্ডনীয় হবে এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকবে।

এতে বলা হয়েছে, ‘এই নীতিমালার পূর্বোক্ত অনুচ্ছেদেগুলো যাই থাকুক না কেন, বেসামরিক বিমান চলাচল, রাষ্ট্রীয় এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে অথবা অন্যান্য কারণে সরকার যেকোনো সময়ে যেকোনো বেসামরিক ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের ড্রোন আমদানি, সংরক্ষণ ও উড্ডয়নের অনুমোদন মঞ্জুর/বাতিল/ প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা সংরক্ষরণ করে। পরিশেষে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা জারির ছয় মাস পর হতে তা কার্যকর হবে।’

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত পাওয়া গেলে তা ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত করে জারি করা হতে পারে।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১১, ২০১৯ ২:০৪ অপরাহ্ণ