নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘বার’ আকারে ১০০ টনেরও বেশি স্বর্ণের মজুদ রয়েছে দেশের শীর্ষ ১১ স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে। টাকার পরিমানে যার মূল্যে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এসব বেশির ভাগ স্বর্ণ ২৪ ক্যারেটের। এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। ইতিমধ্যে এসব স্বর্ণের সন্ধান পেয়ে গেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর দ্রুত এসব অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি আপন জুয়েলার্সের সাড়ে ১৫ মণ অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এসব স্বর্ণের সন্ধান করতে গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা আরও ১১ জন শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে থাকা বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্বর্ণের খোঁজ পায়। এ ব্যাপারে আপন জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়।
আপন কর্তৃপক্ষ জানায়, এ রকম স্বর্ণ শুধু আমাদের কাছে নয়, আরও অনেকের কাছে আছে। এরপর শুল্ক গোয়েন্দার কয়েকটি টিম অনুসন্ধান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের মজুদ কোথায় রয়েছে ইতিমধ্যে তাও চিহ্নিত করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, এসব স্বর্ণের পুরোটাই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে। তবে শুধু স্বর্ণ মজুদ নয়, এসব ব্যবসায়ীর আয়কর ফাইল ও ব্যাংক হিসাবেও বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে। শুল্ক গোয়েন্দ ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি ও ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে শীর্ষস্থানীয় ১১ স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ব্যাংকিং লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হয়েছে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে।
অবৈধ স্বর্ণের মজুদ ও বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক ব্যাংকিং লেনদেনের প্রকাশিত হওয়ার ভয়ে প্রতাপশালী হিসেবে পরিচিত স্বর্ণ মাফিয়াদের অনেকেই এখন থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ার ভয়ে আতংকিত।
সূত্র জানায়, শীর্ষস্থানীয় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্স একের পর এক অভিযান ও মামলায় এখন ধরাশায়ী। প্রতিষ্ঠানটি যে কোনো মূল্যে এ ‘বিপদ’ থেকে মুক্তি একাধিক প্রভাবশালীর সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগ তৎপরতা চলছে।
আপন জুয়েলার্সের পক্ষে প্রভাবশালী মহলের তদ্বির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে হাতেগোনা যে কয়টি প্রতিষ্ঠান পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ স্তরে থেকে কাজ করছে, শুল্ক গোয়েন্দা তার একটি। এখানে অস্বচ্ছতা বা ‘ম্যানেজ’ শব্দের কোনো স্থান নেই।
জানা গেছে, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এখন মূলত দুটি দাবি দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এর একটি হল বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ। আরেকটি অপ্রদর্শিত স্বর্ণের বৈধতা।সূত্র বলছে, এ দুটি দাবির মধ্যে স্বর্ণ আমদানির বৈধ পথ খুঁজতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে ধর্ষণ মামলায় আসামি হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির অন্দরমহলের একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
দৈনিক দেশজনতা/এমএম