২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:০৬

বিদ্যুতের দাম বাড়ালে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি বিএনপির

গ্রাহক পর্যায়ে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটে প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী। সাধারণ মানুষ হাহুতাশ করছে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে সরকার। এবার যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তবে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামবে বিএনপি।’

মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, দলীয় সিন্ডিকেটের কারণে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এই অগ্নিমূল্য লাগাতারভাবে আমাদের সাধারণ জনজীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত  করে ফেলেছে। সে বিষয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতা দেশবাসীকে অবগতকরণের অংশ হিসেবেই আজ  আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম শুধু বিএনপিকে এফেক্ট করে না, পেঁয়াজের দাম শুধু বিএনপিকে এফেক্ট করে না, সবাইকে এফেক্ট করে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতির পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। দ্রব্যমূল্যের বাজারকে অসহনীয় করার জন্য দায়ী ভোটারবিহীন সরকার। দলীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে এবং টিসিবিকে (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল। বলেন, ‘বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সরকারের। কে কি খাবে তা নির্ধারণ করা সরকারের দায়িত্ব নয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশবাসীর কাছ থেকে ভোটারধিকার আর নাগরিক মর্যাদাই এই ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচার সরকার ছিনিয়ে নেয়নি, এমনকি জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-শান্তিও আজ  একের পর এক কেড়ে নিচ্ছে গণবিরোধী এই সরকার। ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনমূলক মিডনাইট নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট, পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির চিত্র এবং গুম, খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় গোটা রাষ্ট্র যখন গণতন্ত্র ও আইনবিহীন হয়ে পড়েছে তখন স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ পেঁয়াজ, চাল, ডাল, তেল, লবণ থেকে শুরু করে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি।’

ফখরুল বলেন, পেঁয়াজের দুর্মূল্য নিয়ে গত মাস কয়েক যাবত আমরা কথা বলছি। দেশের সকল গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিদিন রিপোর্ট হচ্ছে। সরকারপ্রধান নিজেও পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, আর কোনও সমস্যা নাই বলেই এয়ার শো দেখতে দুবাই থেকে ইডেন গার্ডেন্স হয়ে এখন আবার মাদ্রিদ শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এদিকে পেঁয়াজের ঝাঁজে এখন চাল, ডাল, লবণ, তেল, আদা, রসুন থেকে শুরু করে শীতকালীন সকল সবজিতে সংক্রমিত হয়েছে। মোটকথা, দৈনন্দিন জীবনে রান্নার জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমানার বাইরে চলে গেছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে জনগণকে পেঁয়াজ খেতে নিষেধ করছে। তাহলে চালের মূল্য কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা, আটার মূল্য ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এখন কী বলবেন! তারা কি বলবেন- ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিতে? রুটি খাওয়া বন্ধ করে দিতে? ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে, সুতরাং তেল খাওয়াও কি বন্ধ করে দিতে হবে? আপনাদের কি মনে হয় এগুলো সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? কোনও সরকার যারা জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেন তারা এ ধরনের উদ্ভট কথা কখনোই বলতে পারে না।’

দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বর্গতি রোধে সবাইকে এ অরাজক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই বলে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণকেই এখন ‍রুখে দাঁড়াতে হবে।’

রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশের ক্রিয়াশীল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সরকার- এমন অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জবাবদিহিতার সরকার গঠন করতে হবে। অবাধ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ৩, ২০১৯ ৫:০৪ অপরাহ্ণ