রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়ার নিহতের ঘটনায় করা মামলায় দুই চালকসহ ৩ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বাসমালিক জাহাঙ্গীর আলম ও চালকের সহকারী শাহাদাত হোসেনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা হলেন- জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাহ, আরেক গাড়ির চালক জোবায়ের সুমন ও হেলপার আসাদ কাজী। আসাদ পলাতক রয়েছেন।
রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন বিচারক। এ মামলায় ৩৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
অপর আসামি জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাত হোসেন আকন্দের মামলার অংশ উচ্চ আদালত স্থগিত করায় সে বিষয়ে রায় হয়নি।
গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন। আর ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত চার্জ গঠন করেন।
মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনার ১ বছর ৪ মাস পর রায় ঘোষিত হলো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের পাল্লায় বাসচাপায় নিহত হন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। আহত হয় আরও ১০-১৫ শিক্ষার্থী।
ঘটনার দিনই নিহত মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন।
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
২৫ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন।
এই মামলার আসামি করা হয় জাবালে নূর পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং তাদের সহকারী এনায়েত হোসেন।
জাবালে নূর পরিবহনের আরেক মালিক শাহাদাত হোসেন জামিনে রয়েছেন। তার পক্ষে মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। চালকের সহকারী কাজী আসাদ এখনও পলাতক।
রাজধানীতে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ওই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করেন।
একই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অনেকটা তৎপর হয়।