জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন ও ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে তিন বিভাগের সব পেট্রলপাম্পে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এছাড়া কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়ির জেনারেটরের তেল নিতে আসা গ্রাহকরাও পড়েছেন বিপাকে।
গত মঙ্গলবার বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশের মহাসচিব এবং পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ১৫ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নিতে ব্যর্থ হলে ১ ডিসেম্বর থেকে তিন বিভাগে সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে ধর্মঘট পালন করছেন তারা।
ধর্মঘটের কারণে তিন বিভাগের যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন।
আমাদের যশোর প্রতিনিধি জানান, জেলাটিতে প্রায় তিন শ পেট্রোল পাম্প আছে। ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রয়েছে। অনেকে তেল নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। পাম্প বন্ধের কারণে আমন ধান মাড়াই করতে কৃষককে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক বাইকারও পাম্পে এসে তেল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে মেহেরপুর জেলার কোনো পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি তেল ডিজেল, পেট্রল, অকটেন বিক্রয় হচ্ছে না। তেল নিতে গিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সবাইকে। এতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা। এছাড়া সামনে বোরো মৌসূমে তেল বিক্রয় বন্ধ থাকলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হবে কৃষকদের।
সকালে মেহেরপুরের নূর ফিলিং স্টেশনে তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসেন এক কৃষক। তিনি বলেন, ‘এভাবে তেল বিক্রি বন্ধ রাখলে আমাদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। এখন শীতকালীন সবজি ও বোরো ধান রোপনের মৌসুম শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে জ্বালানি তেল না পেলে বোরো চাষ বিঘ্নিত হবে।’
একই চিত্র রংপুর বিভাগের আট জেলাতেও। জ্বালানি তেল পেট্রোল পাম্প মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকে রংপুর মহানগরীর পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। কিছু পাম্প খোলা থাকলেও জ্বালানি তেল বিক্রয় সেবা বন্ধ রয়েছে।
ধর্মঘটের কারণে মোটরসাইকেল চালকসহ বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে ধর্মঘটের বিষয়টি বেশিরভাগ লোকের অজানা থাকায় পাম্পে তেল নিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
রংপুর জ্বালানি তেল সংরক্ষণাগার মেঘনা, পদ্মা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, তাদের আওতায় রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে মোট ফিলিং স্টেশনের রয়েছে ১৫২টি। এর মধ্যে রংপুরে রয়েছে ৮৫টি। এসব ফিলিং স্টেশন মজুদের ক্ষমতা রয়েছে ডিজেল ২৭ লাখ, কেরোসিন ১০ লাখ ৬০ হাজার, পেট্রোল ৬ লাখ ও অকটেন ৬ লাখ ৮০ হাজার লিটার। চাহিদা রয়েছে ডিজেল ১ কোটি ২৫ লাখ ডিজেল, পেট্রোল ২৫ লাখ ৫০ হাজার ও অকটেন ৪ লাখ ৪০ হাজার লিটার। কিন্তু চাহিদার তুলনায় রংপুরে অর্ধেকেরও কম জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়েছে।
ধর্মঘট রংপুর বিভাগ ছাড়াও খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব ডিপোতেও চলছে। এতে জ্বালানি তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।