যশোর জেলায় ১৭০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে মাত্র ১৩টির হালনাগাদ লাইসেন্স রয়েছে। বাকিগুলো অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতিমধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
বন্ধ করে দেয়া ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো হলো- যশোর শহরের ঘোপ জেলখানা রোডের বন্ধন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঝিকরগাছার সালেহা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মণিরামপুরের প্রগতি সার্জিক্যাল ক্লিনিক এবং অভয়নগর নওয়াপাড়ার মমতাজ হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
যশোর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফতে আলী হাসান ও মেডিকেল অফিসার ডা. মাশহুরুল হক জুয়েলের নেতৃত্বে একটি টিম প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় যশোর শহরের আরো সাতটি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসাসেবাসহ সব কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এগুলো হলো- শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের যশোর আধুনিক হাসপাতাল, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের রেনেসাঁ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দেশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবজোন স্পেশালাইজিড হসপিটাল, কমটেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতাল, পিয়ারলেস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও যশোরের খাজুরার ফারিহা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, লাইসেন্স না করা পর্যন্ত এই সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা জারি করে নোটিশ দেয়া হবে। আরো একাধিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কালো তালিকাভুক্তের কাজ চলছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় মোট বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে ১৭০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় ৬৮টি, শার্শা উপজেলায় ২৪টি, কেশবপুরে ১৫টি, অভয়নগরে ১৫টি, মনিরামপুরে ১১টি, চৌগাছায় ৮টি, বাঘারপাড়ায় ৭টি এবং ঝিকরগাছা উপজেলায় রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে যশোর আড়াইশ শষ্যা হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে কমপক্ষে ৪০টি।
২০১৭ সালের পর থেকে যশোর জেলায় কমপক্ষে ৬০টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান মালিকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেই রোগীদের অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা সেবা ও পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যা সরকারি নিয়ম বহির্ভূত। স্ব স্ব নীতিমালায় চলছে এ সব প্রতিষ্ঠান। রোগীদের কাছ থেকে নিজেদের মতো করে ফি আদায় করছে তারা। একই ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য একেক প্রতিষ্ঠানে আদায় করে একেক ধরনের ফি। সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পরও অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্ধারিত ফি এর তালিকা টানানো হয়নি।
সূত্রটি আরো জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির জন্য ৩৭ ধরনের, মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইমিউনোলজির জন্য ৪১, বায়োকেমিস্ট্রি ৪২, হিস্ট্রোপ্যাথলজি ৩, ড্রাগ এবিউজ ৮, থেরাপিউটিক ড্রাগ ৫ ও ভাইরোলজির ২৩ ধরনের গ্রহণযোগ্য ফি অনুমোদন করা হয়।
ক্লিনিক্যাল প্যাথলজির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮০ ও সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা; মাইক্রোবায়োলজি এ্যান্ড ইমিউনোলজিতে সর্বনিম্ন ১৫০ ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ টাকা; বায়োকেমিস্ট্রিতে সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা; হিস্ট্রোপ্যাথলজিতে সর্বনিম্ন ৫০০ ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা; ড্রাগ এবিউজে সব ধরনের পরীক্ষা ৫৫০ টাকা; থেরাপিউটিক ড্রাগের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা ও ভাইরোলজির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ ও সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়।
অভিযোগ আছে, এসবের কিছু মানা হচ্ছে না প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সরকারের অনুমোদন না নিয়ে খুলে বসা এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে চলছে ব্যবসা। তাদের ফাঁদে পড়ে অনেক রোগী নানা হয়রানি শিকার হচ্ছে।
এমনও অভিযোগ আছে, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দিয়ে চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা এবং দেয়া হয় মনগড়া রিপোর্ট। ভাড়া করে আনা হয় চিকিৎসক। পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, যশোর জেলার মাত্র ১৩টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের হালনাগাদ লাইসেন্স রয়েছে। বাকিগুলো অবৈধভাবে পারিচালিত হচ্ছে। অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু এসব আবেদন সব ত্রুটিপূর্ণ। যে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনের জন্য তার কাছে আজ অবধি চিঠি আসেনি। সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন মনে না করে প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন তারা। ভুঁইফোড় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
লাইসেন্স না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। যে কোনো সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করতে পারে।
তিনি জানান, ২০১৭ সাল পর্যন্ত যাবতীয় রাজস্ব পরিশোধ করে যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যথাযথ অনুমোদন হালনাগাদ আছে, কেবলমাত্র সেইসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ থাকবে।