রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আট আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল।
সকালে আদালতে আনার সময় রিগ্যানের মাথায় এই টুপি ছিল না। রায় ঘোষণা শেষে সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মাথায় আইএসের একটি টুপি পরে। এরপরই উপস্থিত আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে বিষয়টি। টুপি কোথায় থেকে পেলো—এমন প্রশ্নের জবাবে রিগ্যান বলে, ‘কারাগার থেকে নিয়ে এসেছি।’ এরপরেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে প্রিজনভ্যানে উঠিয়ে কারাগারে নিয়ে যায়।
রিগ্যানের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আসামি চার বছর কারাগারে আছে। এ টুপি সে কোথায় পেলো, এটা তো আমার প্রশ্ন। এ বিষয়ে আমি আমি কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নানা মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
রায় ঘোষণা শেষে অন্য আসামিদের সঙ্গে রিগ্যানও আল্লাহ আকবর বলে চিৎকার করে। আসামি রাজীব গান্ধী বলে, ‘হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে তারা কোনও অন্যায় করেনি। তারা এজন্য বেহেশতে যাবে। এই দেশে একদিন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে চিৎকার করে বলতে থাকে সে।’
রিগ্যানের আইএসের টুপি পরে আদালতে আসার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি বিস্মিত হয়েছি। এই দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। তারা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’
তিনি আরও বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামিরা খুবই উদ্ধত আচরণ করেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কারাগার থেকে আসামিদের স্যান্ডেল পরিয়ে আদালতে নিয়ে আসলেও কাঠগড়ায় খালি পায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই তাদের খালি পায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো—হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।
জানা গেছে, মামলার তদন্তে রাকিবুল হাসান রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম রাফি ওরফে রিপন ওরফে হাসান ওরফে অন্তরের (২০) নাম এসেছে হামলাকারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে। বসুন্ধরার যে বাসা থেকে হামলার পরিকল্পনা হয়, সেই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। সেখানে হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়। বয়সে তরুণ রিগ্যান ২০১৫ সালে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের ২৬ জুলাই সকালে কোচিংয়ের কথা বলে ঘর ছাড়ে। নব্য জেএমবির তরুণ প্রশিক্ষক হিসেবে গাইবান্ধা ও বগুড়ার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া হামলাকারীদের ধর্মীয় ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেয় রিগ্যান। তার বাড়ি বগুড়ার জামিলনগর এলাকায়, বাবার নাম মৃত রেজাউল করিম।২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে পালিয়ে যাওয়ার সময় রিগ্যানকে গ্রেফতার করেন সিটিটিসি’র সদস্যরা। ওই বছরের ৩ অক্টোবর হামলায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। এ মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায় ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। হামলায় অংশ নেওয়া মোবাশ্বর, নিবরাস, খায়রুল, রোহান, পায়েল ও উজ্জ্বলসহ সাতজনকে প্রশিক্ষণ দেয় রিগ্যান।