এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার দেশের চার শতাধিক ছাপাখানা (প্রিন্টার্স) নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ হচ্ছে। তার মধ্যে প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনী বই ছাপার কাজ পেয়েছে ৪৩টি প্রতিষ্ঠান। এ স্তরের দুই কোটি চার লাখ ৪১ হাজার ৫৯৫ ছাত্রছাত্রী পাবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ পাঁচ হাজার ৪৮০ কপি নতুন বই। ৯৮টি লটে এগুলো ছাপানো হচ্ছে। এসব বই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন বই পৌঁছে দিতে কাজ করছে ১৬ হাজার ৪০০ ট্রাক।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রাথমিকের ৭৭ ভাগ বই চলে গেছে। চলতি মাসের মধ্যে বাকিগুলো পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’
এদিকে এরইমধ্যে ৮৫ ভাগ বই পাঠ পর্যায়ে চলে গেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৯৭ হাজার ৫৭২ শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির জন্য পাঁচটি ভাষায় রচিত দুই লাখ ৩০ হাজার ১০৩ কপি বই একটি লটে ছাপানো হচ্ছে। এ মাসের ২৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পৌঁছে যাবে শতভাগ নতুন বই।
এবার বই ছাপা হচ্ছে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৮ কপি। এসব বই ছাপতে ৮৮ হাজার টন কাগজের ব্যবহার হচ্ছে। গতবার সবমিলিয়ে ছাপা হয়েছিলো ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বই। তার মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ১০ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৩৭৫ কপি বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হবে। সে অনুযায়ী এবার বিনামূল্যে বিতরণের বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে ১০ লাখ কপি। নতুন বই মুদ্রণের কাজে মোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। আর এবার বই ছাপাতে শত কোটি টাকার বেশি খরচ কমেছে বলেও জানা গেছে।
এনসিটিবির সদস্য (অর্থ) মীর্জা তারিক হিকমত বলেন, ‘২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের বই ছাপতে সরকারের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপতে খরচ হচ্ছে ২৬৪ কোটি টাকা। মাধ্যমিক, ভোকেশনাল ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ৬৬৫ কোটি টাকা খরচ হবে।’
গতবারের চেয়ে এবারের দরপত্রে তুলনামূলক কম দরে কাজ দেওয়ায় সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ কমেছে বলে জানান তিনি।
এনসিটিবির একটি সূত্রমতে, কিছু মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই কর্মযজ্ঞ শুরুর পর থেকেই টেন্ডার জটিলতা, সময়মত কাগজ ও আর্টপেপারের মান যাচাই ছাড়পত্র না দেয়া, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর অভিযোগসহ নানা কারনে বই ছাপার কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এরপরও যথেষ্ঠ তদারকির মধ্য দিয়ে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ প্রায় শেষ করে এনেছে এনসিটিবি ও মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো।
এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্রেইল পদ্ধতির শতভাগ বই এরইমধ্যে চলে গেছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৮৭ ভাগ বই মাঠ পর্যায়ে গেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৭৭ ভাগ এবং মাধ্যমিকের ৮৭ ভাগ। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বইগুলোর কাজ শেষের পর্যায়ে। এগুলো ২৫ থেকে ৩০ নভেম্বর চলে যাবে। অর্থাৎ চলতি মাসেই সর্বস্তরের বই শতভাগ পৌঁছে যাবে।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন জটিলতার সমাধান শেষে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে। ছাপাখানায় এখন উৎসবের আমেজ।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এবছর আমাদের প্রধান গুরুত্ব ছিলো কাগজের গুণগত মানের উপর। সেসব বিষয়ে আমরা কিছু বাধার সম্মুখিন হয়েছি। তাই কাগজের মিলগুলোতে নজরদারীও বাড়িয়েছি। যেসব প্রিন্টিং প্রেসগুলো কাগজ কিনে মুদ্রণ করে সেখানেও আমরা দফা দফায় যাচাই করেছি। তবুও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী।’
এদিকে চলতি মাসের মধ্যে নতুন বইয়ের সমস্ত কাজ শেষ না করতে না পারলে জরিমানা আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে না পারলে জরিমানার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যাদের কাজের ক্ষতি হয়েছে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সে ক্ষেত্রে হয়তো কিছুদিন বিলম্ব হতে পারে। তবে সেটি খুব বেশি দিন দীর্ঘায়িত হবে না।’