২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৫৬

এবার লবণ নিয়ে হুলস্থুল বাঁধানোর চেষ্টায় অসাধু চক্র

জোগান ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও দেশের কয়েকটি জেলায় লবণের দাম বাড়ার গুজব ছড়ানো হয়েছে। একারণে লবণ সংগ্রহ করে রাখতে দোকানে ভিড় করছেন সাধারণ ক্রেতারা। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লোটার চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে কয়েকটি জেলায় স্থানীয় প্রশাসন বেশকিছু ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছে।

তবে দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি লবণ মজুদ রয়েছে।

দেশের লবণ উৎপাদনকারী মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে লবণের জোগান ও সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। গুজব রটানোকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা না কাটতেই আরেকটি নিত্যপণ্য লবণ নিয়ে হুলস্থুল বাঁধানোর চেষ্টাকে নজিরবিহীন বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার দিবাগত রাতে হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশ এলাকায় লবণের দাম বাড়ছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত রানার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে শহরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে চার ব্যবসায়ীকে আটক করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকার ব্যবসায়ী মো. আব্দুল কাদির নানু ও বাতিরপুর এলাকার কানাই দাসের ছেলে সুরঞ্জিত দাস। অর্থদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন চৌধুরী বাজার এলাকার রাজকুমার রায়ের ছেলে মিঠুন রায় ও নোয়াহাটি এলাকার রবিন্দু পালের ছেলে রঞ্জিত পাল।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত রানা বলেন, ‘লবণের দাম বাড়েনি। এটা একটা গুজব। যারা এ গুজব রটাবে বা কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য মজুত রাখবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জনসাধারণকেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় লবণের দাম বেড়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে ভিড় জমে যায় বিভিন্ন দোকানে। সাধারণ ক্রেতাদের কেউ কেউ সর্বনিম্ন ৫ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ কেজি পর্যন্তও লবণও কিনে নেন।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় খালিয়াজুরী সদর এলাকা থেকে লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়ানোয় হায়দার চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলায়।

গ্রেপ্তার হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে  প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খালিয়াজুরী থানার ওসি এটিএম মাহমুদুল হক।

অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মজুতের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েব বস্তা লবণ জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সোমবার দিবাগত রাতে লবণের দাম বৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়লে মোটামুটি হুলুস্থুল পড়ে যায় বিভিন্ন বাজারে। বিক্রেতারা কেজিপ্রতি ৩৫ টাকার লবণ ৬০ টাকায়ও বিক্রি করেন।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রাতেই জেলার সাতটি উপজেলা প্রশাসন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লবণের দাম বাড়া নিয়ে গুজবে কান না দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানায়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসাধু ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও ব্যবসায়ী গুজবে কান দিয়ে কারসাজি করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ জেলার বেশ কিছু জায়গায়। গুজবের বশবর্তী হয়ে বেশি পরিমাণে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। পৌর এলাকার বাজারের দোকানগুলোতে সোমবার দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে লবণ বিক্রি বেড়ে যায়। গুজব নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন মাঠে নামার পর পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে।

সোমবার রাতে ছাতক উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপশ শীল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় পৌর শহরের আলী ট্রেডার্স ও নিতাই স্টোর নামক দুই প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার আইন (২০০৯) এর ৪০ ধারায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, গুজব ঠেকাতে এবং লবণ নিয়ে যেন কোনও ব্যবসায়ী কারসাজি করতে না পারেন সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আর লবণের লবণের পর্যাপ্ত জোগান ও সরবরাহ রয়েছে জানিয়ে গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ।

প্রকাশ :নভেম্বর ১৯, ২০১৯ ৫:৩৭ অপরাহ্ণ