আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর প্রায় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ইরান। বিক্ষোভের মুখে রবিবার প্রায় সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ ব্লক করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
১৫ নভেম্বর ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারি রেশনে দেওয়া পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। লিটার প্রতি রেশনের পেট্রোলের দাম ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার রিয়াল করার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য মাসিক বরাদ্দ হিসেবে তেলের পরিমাণ ৬০ লিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর বাইরে বাড়তি পেট্রোলের প্রয়োজন পড়লে লিটার প্রতি দাম পড়বে ৩০ হাজার রিয়াল। সরকারের ওই ঘোষণার পরই দেশজুড়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে।
ইরানের আধা সরকারি ফার্স নিউজের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন দিনের বিক্ষোভে ইতোমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। গ্রেফতারের শিকার মানুষের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
বিক্ষোভের মধ্যেই রবিবার জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থানের কথা জানান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি জানান, সরকারের প্রধান তিন বিভাগ প্রেসিডেন্সি, বিচার বিভাগ ও পার্লামেন্টের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভে ইরানি নাগরিকদের প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও ‘অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের অপচেষ্টা’ চালানোর জন্য অভ্যন্তরীণ বিরোধী শক্তি ও ‘বিদেশি শত্রুদের’ দায়ী করেন তিনি। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দাবি, এসব গোষ্ঠী ইরানকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পর কিছু মানুষকে রাস্তায় বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে তা সবার পছন্দ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কাজেই ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদের নামে নাশকতা সহ্য করা হবে না।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোলরেজা রাহমানি ফাজলি দাবি করেন, নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তিনি হুঁশিয়ার করেছেন, বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করলে শান্তি ফেরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন ভবনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ফুটেজও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ব্যাংকে অগ্নিসংযোগের ফুটেজও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অগ্নিসংযোগ করছে আন্দোলনকারীরা। সে সময় ইরানের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তাদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। শনিবারের বিক্ষোভে এমন সহিংসতার পরই রবিবার বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।