গ্যাস সরবরাহবাবদ গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়ের পর যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।
সর্বশেষ তথ্যানুসারে প্রতিষ্ঠানটির কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া পাওনা মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট/মূসক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
পেট্রোবাংলার দাবি তহবিল সংকটের কারণে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস ক্রয় করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করতে হয় তাদের। ফলে বাড়তি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি পেট্রোবাংলার।
এ নিয়ে এনবিআর ও পেট্রোবাংলা দফায় দফায় বৈঠক করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর মূসক-নিরীক্ষা ও গোয়েন্দার সদস্য মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ সভা হয়। সভায় পেট্রোবাংলাকে আরো উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সভায় পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক শঙ্কর মজুমদার দাবি করেন, পেট্রোবাংলা সরবরাহকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার তাদের নেই। পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস ক্রয় করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাপোর্ট ফর শর্টফলের বকেয়ার বিষয়ে বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করায় সেখানে উদ্বৃত্ত রাজস্ব আদায় করা হয়নি। তাছাড়া বকেয়া পরিশোধের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তারা জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়কে তাদের কাছে দাবিকৃত রাজস্ব পরিশোধ করার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তাদের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। অর্থবিভাগ থেকে বরাদ্দ নিয়ে অথবা বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট) কমিশনার মো. মুবিনুল কবির এ বিষয়ে বলেন, পেট্রোবাংলা গত অর্থ বছরে প্রায় ২ হাজার ৮ কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করলেও এ অর্থবছরে কোনো বকেয়া পরিশোধ করেনি। এনবিআর চেয়ারম্যান ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের মধ্যে এ বিষয়ে সভা হয়। ওই সভায় সাপোর্ট ফর শর্টফল বিষয়ে এনবিআরের সিদ্ধান্ত পেট্রোবাংলাকে অবহিত করেন। পূর্বের বকেয়া আদায়ের বিষয়ে পেট্রোবাংলার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্তের বিষয়ে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলা নিজস্ব প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হয়ে বিদ্যমান বকেয়া রাজস্বসমূহ পরিশোধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এছাড়াও ২০১৫ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজস্ব তহবিল থেকে অথবা বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। যদি তহবিল সংকট থাকে প্রয়োজনে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ নেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও দ্রুত বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। যদিও এর আগে কয়েক দফা বৈঠক করে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের বকেয়ার মধ্যে মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) বৃহৎ করদাতা ইউনিট চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করলেও বকেয়া আদায়ের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
গত চার বছর ধরেই পেট্রোবাংলার বকেয়া অর্থ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর সঙ্গে বহু চিঠি চালাচালি ও বৈঠক হয়। এর মধ্যে কিছু অর্থ পরিশোধ হলেও বকেয়া রাজস্ব কাগজে-কলমে প্রাপ্তি (বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট) হিসেবে দেখানোর উদ্যোগ নেয় এনবিআর। অর্থাৎ ওই বকেয়া অর্থ এনবিআরের প্রাপ্তি হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় হিসেবে দেখানো হবে। কিন্তু অডিট সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় তাও আটকে যায়। এ পরিস্থিতিতে এসব অর্থের সুরাহা করতে অর্থ সচিব এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠায় এনবিআর। যেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি উল্লেখ করে বকেয়া অর্থ পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন বারবার।