দেশের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে ১৪ জন মারা গেছে। এ সময় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। আবার ঝড়ের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় দুই নারী দুটি শিশু প্রসব করেছেন।
এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাকালীন একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ১২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পটুয়াখালীতে এক জন, খুলনায় দুই জন, বাগেরহাটে দুই জন, বরিশালে একজন, বরগুনায় একজন, শরিয়তপুরে দুই জন, গোপালগঞ্জে দুই জন এবং পিরোজপুরে এক জন মারা গেছেন। এর বাইরে আমাদের প্রতিনিধিরা পটুয়াখালীতে আরো এক জন এবং মাদারীপুরে এক জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
ডা. আয়শা আক্তার বলেন, বরগুনা সদরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হালিমা খাতুন (৭০) নামে এক বৃদ্ধার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, আহত ২৫ জনের মধ্যে ছয় জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৯ জন।
ডা. আশয়া আক্তার জানান, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে আশ্রয়কেন্দ্রে দুই নবজাতকের জন্ম হয়েছে। নবাগতরা সুস্থ রয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা নতুন দুই অতিথিকে সেবা দিচ্ছে। এই দুই নবজাতকের নাম ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সঙ্গে মিলিয়ে ‘বুলবুলি’ রাখা হয়েছে।
আমাদের বাগেরহাট সংবাদদাতা আলী আকবর টুটুল জানান, রামপাল উপজেলায় ঘরচাপা পরে কিশোরী সামিয়া আক্তারের (১৫) মৃত্যু হয়েছে। এ সময় দুই জন আহত হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ভরসাপুর গ্রামে ঝড়ের সময় বসত ঘরের উপর গাছ পড়লে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সামিয়া রামপাল উপজেলার দর্পনারায়ণপুর গ্রামের বাবুল শেখের মেয়ে। সে উজলকুর ইউনিয়নের ভরসাপুর গ্রামের দুলাভাই আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি বেড়াতে আসছিল।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় জানান, সামিয়া বসত ঘরে অবস্থান করছিল। এ সময় ঝড়ো বাতাসে বসত ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়লে দেয়াল ভেঙে পড়ে। আহত দুই জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানান, নিহত কিশোরীর পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬০ হাজার টাকা সাহায্য দেয়া হবে।
বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জে. খান স্বপন জানান, উজিরপুর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঘরের উপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ আসমত মজুমদারের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। তিনি উজিরপুর পৌরসভার দক্ষিণ মাদাসী গ্রামের বাসিন্দা।
বিকেল পৌনে ৩ টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঝড়ের বৃদ্ধ আসমত মজুমদার নিজ ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবস্থান করছিলেন। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার ঘরের পাশের বড় গাছ ভেঙে ঘরের চালে পড়ে। এতে ঘর ভেঙে তিনি ঘটনাস্থানে মারা যান।
তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা সুস্থ রয়েছেন। বিকেল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মাদারীপুর সংবাদদাতা বেলাল রিজভী জানান, সদর উপজেলায় ঘরের মধ্যে আলমারি চাপা পড়ে গৃহবধূ সালেহা বেগমের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। সালেহা বেগম উপজেলার ঘটমাঝি গ্রামের আজাদ খাঁয়েরের স্ত্রী।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস জানান, বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সালেহা বেগমের ঘরের একটি আলমারি তার গায়ের ওপর পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। ঝড়ে জেলার চারটি উপজেলার বিভিন্নস্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।