রায়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি বলেন, কারও বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার না হরণ করে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট সেগুলি নন ইসলামিক। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় যুক্তিযুক্ত ছিল।
তিনি বলেন, ফাঁকা জায়গায় তৈরি হয়নি বাবরি মসজিদ, মসজিদের নিচে কাঠামো ছিল। বাবরের সহযোগী মির বাকি মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তবে কবে মসজিদ তৈরি হয়েছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
রায়ে বলা হয়, বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জায়গাটি কখনো মুসলিমদের বেদখল হয়নি। তবে তারা এটিকে স্থায়ী স্বত্ব হিসেবে দাবি করতে পারে না এবং এটি মুসলিমদের স্থায়ী সম্পদ সেবিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই।
কট্টরপন্থী হিন্দুরা দাবি করেন বাবরি মসজিদের জায়গাতেই ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল এবং একটি রামমন্দির ভেঙ্গে মোগল আমলে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে কট্টর হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় দুই হাজারেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়।
রায়ের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, যে ৩৮টি জেলা এমনিতেই সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল, সেখানে বাড়তি বাহিনী নামানো হয়েছে। টহল চলছে দিন রাত। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যারা উত্তেজনা ছড়াতে পারে, এমন লোকদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
কড়া নজর রাখা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমেও যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে। লখনউ আর জেলা সদরগুলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর বলছে, দুটি হেলিকপ্টার তৈরি রাখা হচ্ছে, যার মধ্যে একটি থাকবে অযোধ্যায়। অযোধ্যার নিরাপত্তাও কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে।
রায় উপলক্ষে মাসখানেক ধরেই অযোধ্যা শহরে ১৪৪ জারি রয়েছে। তবে শহরের সাধারণ হিন্দু আর মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই যে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কয়েক শতাব্দী ধরে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বারবার দাঙ্গা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার ভেতরের অংশটা মুসলিমদের আর বাইরে চত্ত্বরটা হিন্দুদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মসজিদের ভেতরে কে বা কারা রামের মূর্তি রেখে দেয়। মুসলিমরা তখনই প্রতিবাদ করেন এবং সরকার জমিটিকে বিতর্কিত ঘোষণা করে তালা বন্ধ করে দেয়।
জমির মালিকানা কার সেটা ঠিক করতে সেবছরই আদালতে প্রথম মামলা হয়। এরপরে ফৈজাবাদের জেলা আদালত ১৯৮৬ সালে তালা খুলে হিন্দুদের পূজোর অনুমতি দেন। আর তখন থেকেই রামজন্মভূমি আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে।
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় যে বিতর্কিত জমিটি তিনভাগ হবে- দুভাগ পাবেন হিন্দুরা আর এক ভাগ পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তার বিরুদ্ধে সবপক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় ২০১১ সালে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বাইরে সব পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় মামলাটি বিশেষ বেঞ্চ শুনানি করে।