জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা সাদেক হোসেন খোকা। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা খোকার সঙ্গে নেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট। পাসপোর্ট নেই তার স্ত্রী ইসমত আরারও। তাই মৃত্যুর পর দেশের মাটিতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানালেও পাসপোর্ট না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে পরিবারটিকে।
ইতিমধ্যে পাসপোর্টের জন্য নিউইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দিয়েছেন খোকার স্ত্রী। তাদের পক্ষ থেকে পাসপোর্টের বিষয়টিকে নিয়ে মানবিক হওয়ার আবেদন জানালেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু করণীয় নেই বলে জানানো হয়েছে। খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন এমনটিই জানিয়েছেন।
শনিবার এক ভিডিওবার্তায় খোকাপুত্র বলেছেন, ‘আজমায়ের লেখা আবেদনপত্র নিয়ে দূতাবাসে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে যে- পাসপোর্টের আবেদনের ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। কিন্তু আমরা যদি ট্রাভেল ডকুমেন্টের জন্য আবেদন করি সেক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়রকে। তার চিকিৎসায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরাও।
খোকার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালে খোকা ও তার স্ত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ কনস্যুলেটে তাদের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো সদুত্তর পায়নি।
খোকাপুত্র ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইছি। সরকারের কাছে আবারও আবেদন করছি, আমাদের বিষয়টি, আমার বাবা-মায়ের বিষয়টি একটু সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখুন। আমার বাবা-মায়ের পাসপোর্ট ইস্যু করার আন্তরিক উদ্যোগ নিন। যাতে আমরা বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পারি। আমরা সরকারের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করছি। এছাড়া আর কিছু তো আমাদের বলার নেই।’
এদিকে খোকার স্ত্রী ইসমত আরা শুক্রবার নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বরাবর লেখা চিঠিতে মানবিক বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে তাদের দুজনের জন্য আবেদনকৃত পাসপোর্ট ইস্যুর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থায় সাদেক হোসেন খোকাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এই মানুষটি ১৯৭১ সালে দেশের জন্য যুদ্ধ করা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তার হাতে আজকে কোনো পাসপোর্ট নেই। তাই বর্তমানে জীবিত কিংবা মৃত কোনো অবস্থাতেই তাকে বাংলাদেশে নেয়ার সুযোগ নেই। জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আজ আমারও একই দশা।’
২০১৪ সালের মে মাসে ক্যানসার চিকিৎসার উদ্দেশে ভ্রমণ ভিসায় সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রে যান ঢাকার সাবেক মেয়র খোকা। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তারা।