২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১০

মানবপাচার মামলায় শিশু আলাউদ্দিনের জামিন

সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহরিুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জামান আক্তার বুলবুল। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। এ সময় আদালতে শিশুটির মা রোজিনা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে করা এই মামলায় ১২ বছরের শিশুর বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, একদম মাইনর ছেলে। সর্বোচ্চ ১২ বছর হবে। আদালত তাকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন।

শিশুটির আইনজীবী জামান আক্তার বুলবুল জানান, ঘটনা দেখানো হয়েছে ২০১৪ সালের। আর মামলা করেছে ২০১৮ সালে। কিন্তু এখন তার বয়স ১২ বছরের মতো।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বছর রামুর হাজিপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (৪১) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে একটি পিটিশন মামলা করেন। মামলায় রামুর চাকমারকুল এলাকার ওই শিশুসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।

ঘটনা দেখানো হয়, ২০১৪ সালের ২০ জুন রাত এবং ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিনা খরচে মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনে কাজ দেবে বলে বাদীকে ওই বছরের ২১ জুন সাগরে ছোট নৌকা দিয়ে জাহাজে তুলে দেন। কয়েকদিন পরে জাহাজ থেকে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় পাহাড়ের জঙ্গলে নামিয়ে দেয়। সেখানে দালালরা মারধরে মুক্তিপণ দাবি করে। মোবাইল ফোনে স্বজনদের কাছ থেকে ওই শিশুসহ এক ও ২ নম্বর আসামি দুই লাখ টাকা নেন। পরবর্তী সময়ে আরও এক লাখ টাকা নেয়ার পর মালেয়শিয়া পৌঁছান নুরুল ইসলাম। ২০১৭ সালের জুন মাসে মালেয়শিয়া অভিযানকালে তিনি আটক হন। এক বছর জেল খাটার পর দেশে ফেরত এসে মামলা করেন।

আইনজীব জামান আক্তার বুলবুল বলেন, এই মামলা এখন সাক্ষী পর্যায়ে আছে। আদালতে আলাউদ্দিনের সঙ্গে এসেছেন তার মা রিজিয়া বেগম। তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন।

রিজিয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বাসাবাড়িতে কাজ করি। ঠিকমতো একবেলা ভাত নিজে না খেয়ে তাদের খাওয়াই। মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে ওদের পড়ালেখা খরচ যোগাতে পারছি না।  ছেলে-মেয়েরা যখন খায় তখন আমি পেটে কাপড় বেঁধে রাখি যাতে আমার পেট উঁচু থাকে এবং ছেলে মেয়েরা বুঝতে পারে যে, আমিও খেয়েছি।’

কান্নারত অবস্থায় তিনি আরও বলেন, ‘এত কষ্ট করি ছেলেমেয়েদেরকে মানুষ করার জন্য। প্রতিনিয়ত যুদ্ধে করে যাচ্ছি। এর মধ্যে সম্পত্তির লোভে আমার এই নিষ্পাপ ছেলেটিকে বয়স বাড়িয়ে মানবপাচার মামলা দিয়ে জীবন শেষ করে দিয়েছে। কী অপরাধ করেছিলাম আমরা? কী অপরাধ ছিল আমার এই ছেলের। সে তো মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা, খেলাধুলা করার কথা, কিন্তু আজ সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এখানে সেখানে।’

রিজিয়ার অভিযোগ, মামলার বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার কারণে গত ১৫ অক্টোবর তার খুপড়ি ঘর ভেঙে দিয়েছে তার সতিনের ছেলেরা। আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, থালা-বাসন লুটের পাশাপাশি ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজিয়া। যার কারণে ভয়ে বাড়িছাড়া অসহায় পরিবারটি।

প্রকাশ :অক্টোবর ২৮, ২০১৯ ৫:২৬ অপরাহ্ণ