হাবিপ্রবি’র সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান। লিয়েনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি হাবিপ্রবিতে ফিরে যান এবং ২২ ফেব্রুয়ারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। ছুটির দিনে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকার অনুমতি চেয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি আবেদন করেন। আর ৫ মার্চ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস শাখার পরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। হাবিপ্রবির তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সফিউল আলম শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে না এই শর্তে মোস্তাফিজার রহমানকে হাবিপ্রবি’র ছুটির দিনে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকার অনুমতি দেন ।
খণ্ডকালীন শিক্ষকতার অনুমতি পেলেও অধ্যাপক ড.মোস্তাফিজার অনুমোদন ছাড়াই লিয়েনে থাকা অবস্থায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শুধু তাই নয়, লিয়েনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেননি।
হাবিপ্রবি থেকে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার ছুটির দিনে শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকার অনুমতি নিলেও গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ডিনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে।
জানা যায়, অনুমতি পাওয়ার আগেই ড. মোস্তাফিজার ২০১৮ সালের ১০ মার্চে অবৈধভাবে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিতে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া, চলতি বছরের ২৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্রের কাগজেও ডিন হিসেবে তিনি সই করেন। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও ওই অনুষদের ডিন হিসেবে ড. মোস্তাফিজারের নাম, মোবাইল নম্বরসহ যাবতীয় তথ্যাদি সংযুক্ত রয়েছে।
ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হতে পারবেন না। যদি কেউ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হতে চান, তাহলে তাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিয়েন নিতে হবে। আমরা শুধু সপ্তাহে ছয় ঘণ্টা শিক্ষকতা করার অনুমতি দেই ।’
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. লায়লা পারভীন বানু বলেন, ‘এক সময়ে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের দায়িত্বে ছিলেন। লিয়েন শেষ হওয়ার পর পার্ট টাইমে এখানে রয়েছেন। খণ্ডকালীন কোনও শিক্ষক ডিনের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তিনি কীভাবে ডিন হিসেবে বিভিন্ন নথি ও কাগজপত্রে সই করেছেন এটা আমি জানি না। এটা আমাকে দেখতে হবে। আমি ঢাকায় আছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে কাগজপত্র দেখে জানানো হবে।’
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার বলেন, ‘হাবিপ্রবি থেকে ৩ বছর লিয়েনে থাকা অবস্থায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ডিনের দায়িত্ব পালন করেছি। তবে এখন আমি আর গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নই। হাবিপ্রবি’র অনুমতি নিয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে কী আছে তা আমার জানা নেই। তবে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নির্দেশে জরুরি প্রয়োজনে কিছু কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। জাতীয় ভেটেরিনারি ডিনস কাউন্সিলেও গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদে যোগদান করেছিলাম উপাচার্যের নির্দেশেই। গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অনুপস্থিত থাকায় কিছু কাগজপত্রে সই করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক বলেন, ‘আগে তিনি লিয়েন নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একইসঙ্গে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, এটি আমার জানা নেই। লিয়েন নিয়ে কেউ যেতে পারেন ও ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেও পারেন। তবে লিয়েন ছাড়া এমন দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি আসার আগেই অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান লিয়েন নিয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। লিয়েন শেষ হওয়ার পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু গণবিশ্ববিদ্যালয়ে তার কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। সেই কাজ সমাপ্তের জন্য তিনি সেখানে বন্ধের দিনগুলোতে কাজ করছেন।’