বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করছে। মডেলভিত্তিতে তদন্ত করা হবে এসব ব্যাংক।
এসব কমিটি সঠিকভাবে কাজ করলে তা দেশের ব্যাংক খাতের জন্য শুভকর হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রমতে, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অনিয়ম উদঘাটন হয়েছে সেখানে।
তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বর্তমান সরকার ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও নির্বাহীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।
এর আলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের পরিকল্পনা নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে অনিয়ম-দুনীতিগ্রস্ত ব্যাংকের বিষয়ে তদন্ত শুরু হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিসহ মোট ৭টি কমিটি গঠন হয়েছে। সম্প্রতি গঠিত নতুন ৫টিসহ এখন কমিটির সংখ্যা দাঁড়াল ১২টি। আর দুর্নীতিগ্রস্ত সন্দেহের তালিকায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নাম নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ওয়ান ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক।
এসব কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, শাহজালালসহ ওই পাঁচ ব্যাংকের শীর্ষ পাঁচ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান, শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ঋণ নবায়ন, পাঁচটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবলোপন ও পাঁচটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ সিআইবিতে নিয়মিত করে রাখার বিষয়ে পর্যালোচনা করবে কমিটি।
২৫ গ্রাহকের ঋণের জন্য আবেদন, শাখার মূল্যায়ন, প্রধান কার্যালয়ের মূল্যায়ন, পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, মঞ্জুরিপত্র, প্রকল্প পরিদর্শন প্রতিবেদন, সহযোগী জামানতের মূল্যায়ন, আইনগত মতামত, ডকুমেন্টেশন, ঋণ বিতরণ ও তদারকির বিষয়াদি খতিয়ে দেখা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সব ঋণ বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানজমেন্টের মূল্যায়ন কী ছিল এবং পরে ওই ঋণ মনিটরিংয়ে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল কি না তাও পর্যালোচনা করে দেখা হবে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগ ও আঞ্চলিক অফিস থেকে ওইসব ঋণের বিষয়ে যতগুলো অডিট পরিচালিত হয়েছে সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে।
এসব প্রতিবেদনে যেসব অনিয়ম শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হবে। বাইরের অডিটরদের দিয়ে তৈরি বহির্নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোনো নেতিবাচক মতামত রয়েছে কি না এবং সেগুলোর বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
এসব ঋণের বিষয়ে বাণিজ্যিক অডিট বিভাগের আপত্তিগুলো পর্যালোচনা করা এবং পর্ষদকে বিভিন্ন সময়ে ওই সব ঋণের হালনাগাদ অবস্থা অবহিত করা হয়েছে কি না, এতে পর্ষদের কোনো মতামত ছিল কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনটি ব্যাংকে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেগুলোর জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলো সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক ও ইসলামী শরিয়াভিত্তিতে পরিচালিত আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের দুর্নীতি খতিয়ে দেখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খান্দকার ইব্রাহিম খালেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কমিটি করেছে তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করে এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। আর এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হলে তা পুরো ব্যাংক খাতের জন্য মঙ্গল হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া তদন্তে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অনিয়ম উদঘাটিত হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে একনই তা বলতে চান না তারা।