আদালতে প্রসিকিউটর ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
স্থানীয়ভাবে ‘টিপু রাজাকার’ নামে পরিচিত টিপুর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এটি তদন্ত সংস্থার ৬১তম তদন্ত প্রতিবেদন। পরে একই বছরের ৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ চূড়ান্তের পর তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেছিলেন,‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দুজনকে দীর্ঘ দিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অপরাধ উঠে এসেছে তদন্তে। এসব অপরাধে এ আসামির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।’
গত বছরের ২ মে টিপুর বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলার রাজাকার তালিকা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অধিশাখা এবং ১৯৭১ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে চারটি ভলিউমে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়।
সেদিন টিপু সুলতানের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে হান্নান খান বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ পরবর্তীতে ‘ইসলামী ছাত্র শিবির’র সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪ সালের পর থেকে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিপু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি অবসরে যান।
২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় মতিহার থানার পুলিশ টিপুকে গ্রেপ্তার করে। পরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ
অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি টিপু সুলতান স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাক সেনারা বোয়ালিয়া থানার সাহেব বাজারের এক নং গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মণ্ডলকে আটক করে। পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতনের পর গুলি চালিয়ে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয়।
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় এ আসামি, স্থানীয় রাজাকার ও ৪০ থেকে ৫০ পাক সেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী এলাকায় হামলা চালায়। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায়। এসময় তারা তালাইমারী এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করে। পরে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে ৪ নভেম্বর মাঝরাতে নয়জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
ওই ১১ জনের মধ্যে বেঁচে যাওয়া দুজনের একজন এখনও বেঁচে আছেন। তাকে এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।