দেশজনতা অনলাইনঃ সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ— এমনটা দাবি করে সরকারের পদত্যাগ চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতারা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে এই দাবি জানান তারা।
মানবন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আব্দুর রব। তিনি বলেন, ‘আবরারকে হত্যার মাধ্যমে পুরা জাতিকে হত্যা করা হয়েছে। অবৈধ সরকারের এজেন্ডা হচ্ছে— আমাদেরকে কথা বলতে দেবে না। বিরোধী মতবাদকে কথা বলতে দেবে না। আজকে কেউ কেউ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চান। ছাত্র রাজনীতি অপরাধ নয়, এটা না থাকলে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা হতো না । ছাত্র রাজনীতি না থাকলে এদেশের গরিব শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারতো না, গণশিক্ষা হতো না। ছাত্র রাজনীতি না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে কেউ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারে নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। ১৩ অক্টোবর আবরারকে নিয়ে শোক মিছিল করতে দেয় নাই। এই দেশের জনগণ সরকারের শোক মিছিল করবে, সেটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আপনাদের বিচার হবে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এটার পরিকল্পনা হিসেবে আমরা দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাই না। আপনারা যা করেছেন— সুযোগ পেলে জনগণ আপনাদের পিঠের চামড়া রাখবে না।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আবরারের মতো একজন মেধাবী ছাত্রকে কীভাবে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, এটা সবাই দেখেছেন। তার চাইতে সংকটের বিষয় হলো— এই হত্যাকে এখন সমগ্র জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র চলছে। এই হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত নয়, শুধু ছাত্রলীগ। এরকম একটি খুনি ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কৌশলে সরকার ছাত্র রাজনীতি নিষেধ করার প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছে। মাথা ব্যথার জন্য মাথাই কেটে ফেলার উপক্রম।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলে তাদের বলি— আবরারকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি বুয়েটে ছাত্রদল থাকতো, অন্যান্য ছাত্র সংগঠন থাকতো, তাহলে ওই ছেলেকে বাঁচানো যেতো। ১১ বছর ধরে এই নরকের মতো অবস্থা কারা তৈরি করেছে? আজকে এই কথা বলার সময় হয়েছে যে, এই সরকার নিজে ছাত্রদের হত্যা করে। এই সরকারকে আমরা চাই না। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার ফলাফল দেখেছেন, এখন মানুষের চোখে পাথর, বুকের মধ্য আগুন, মানুষের মনে বারুদ জ্বলে। এজন্য ঠাণ্ডা করার জন্য মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। আমরা ডাকসুর ভিপিরা ভুলবো না। আমরা বিচারের শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বো।’
মানববন্ধনে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে যেভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তার মানে এই সরকারের কাছে জনগণের নিরাপত্তা নেই। এই সরকার ছাত্রসমাজকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। মেধাবী যারাই আছে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে এই সরকার প্রধানের নির্দেশে হত্যা করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য আজকে খালেদা জিয়া কারাগারে। গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে এবং আবরার ফাহাদের হত্যার বিচার করতে হলে জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
মানববন্ধনে ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘আবরার হত্যাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। যেভাবে ছাত্রলীগ সারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তাতে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা স্বীকার করেছে— বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এই বড় ভাই কারা তা খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করেনি, তাই ভাইস চ্যান্সেলরকে পদত্যাগ করতে হবে। বুয়েটের একজন মেধাবী ছাত্রের হত্যাকাণ্ডে তাৎক্ষণিক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না সেজন্য শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আজকে প্রায় দুই বছর খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আজকে দেশে মানবাধিকার নাই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নাই। তাই এই আওয়ামী লীগ সরকারের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে উৎখাত করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।