কাকরাইলের নিজ অফিসের নিচে দুঃস্থ মানুষদের জন্য নিয়মিত খিচুড়ি খাওয়ানো হত সম্রাটের পক্ষ থেকে। অভিযোগ আছে, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো থেকে পাওয়া বিপুল অর্থ থেকে এমন হাতভরে খরচ করতেন তিনি।
অভিযোগ আছে, কাকরাইলের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে চাঁদা না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন সম্রাট। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা সহায়তা করে থাকেন।
সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর কাকরাইলে যুবলীগের কার্যালয়ে অবস্থান নেন। দিনরাত কয়েক শ নেতাকর্মী তার পাহারায় ছিল। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় এমন পাহারা বসানো হয়েছিল বলে জানা যায়। সেখানে বসে গ্রেপ্তার এড়াতে নানাভাবে চেষ্টা তদবিরও চালান। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসেনি। রবিবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে র্যাবের হাতে আটক হন।
জানা যায়, সম্রাটের রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৯০ সালে। সেই সময়কার ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। তখন সারাদেশে এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল। সম্রাট রমনা অঞ্চলে আন্দোলনের সংগঠকের দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে তখন নির্যাতনসহ জেলও খাটতে হয় তাকে। তখন থেকেই ‘সম্রাট’ খ্যাতি পান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরীর জন্ম ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে। তার বাবা ফয়েজ আহমেদ ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। বাড়ি পরশুরামে হলেও সেখানে তাদের পরিবারের কেউ থাকেন না। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় বড় হন সম্রাট।
সম্রাটের বড় ভাই বাদল চৌধুরী ঢাকায় তার ক্যাসিনো ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। ছোট ভাই রাশেদ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর সম্রাটের পরিবারের সবাই গা ঢাকা দেন। সম্রাট থাকতেন মহাখালীর বাসায়। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত কয়েক দিন ধরে তিনি বাসায় ছিলেন না।
সম্রাট ১৯৯১ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি করাবস্থায় এরশাদ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। সে আমলে সম্রাটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১/১১-এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় সম্রাট যুবলীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হতে থাকেন সম্রাট।
যুবলীগের সবশেষ কাউন্সিলে তিনি যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন। আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন একই ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক। দক্ষিণ যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা মিল্কীর হত্যাকাণ্ডের পর সম্রাটের আর পিছু তাকাতে হয়নি। মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা এলকায় অপরাধ জগতের একক আধিপত্য তৈরি করেন সম্রাট। তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সঙ্গে মিলে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্রাটের ঘনিষ্ঠ দুই সহচর হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ (কাউন্সিলর) ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। যুবলীগের অপর প্রভাবশালী নেতা জিকে শামীমও সম্রাটকে অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন। সাঈদকে কাউন্সিলর বানান সম্রাটই। পরে তাকে দিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসা দেখভাল করাতেন সম্রাট।