গঙ্গায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিহার, পাটনা এবং মালদায় বন্যার কারণে এই গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে রাখা হয়। ফলে এটা নতুন কোনও বিষয় নয়। গেট খোলা রাখার কারণে বন্যার শঙ্কা নেই বলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
তবে ফারাক্কার গেট দিয়ে পানি আসার কারণে বাংলাদেশের কী পরিস্থিতি হতে পারে সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে স্বল্পস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ফারাক্কার বাঁধ দিয়ে আসা গঙ্গার পানি পদ্মা হয়ে দেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়বে। এতে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর মানিকগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকার নদী তীরবর্তী অঞ্চল পানিতে কিছুটা প্লাবিত হতে পারে। তবে অন্য অঞ্চলে এর তেমন প্রভাব পড়বে না।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, ‘এটি স্বাভাবিক বন্যা পরিস্থিতি। কয়েকদিন আগে বিহারের দিকে উজানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির প্রভাবেই এখন এই বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি খুব সাময়িক। বেশিদিন থাকবে না। এক সপ্তাহের মতো স্থায়ী হবে। তারপর এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
ফারাক্কার কারণে বন্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফারাক্কার পানি গঙ্গা থেকে পদ্মা হয়ে দেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে সাগরে চলে যাবে। পানি নেমে যাওয়ার সময় মধ্যাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে কিছুটা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
এই প্রকৌশলী আরও জানান, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। পানি এখন নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে যাওয়ার সময় সাময়িক বন্যা সৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতি ১০ দিনের মতো স্থায়ী হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, রাজশাহী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এলাকার নদীর পানি গতকাল সোমবার থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। তবে তা কতটা বাড়বে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা দেওয়া হয়নি। বন্যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ভারত তার এলাকার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং নদীর পানির উচ্চতার তথ্য বাংলাদেশকে দেয় না। সীমান্তবর্তী এলাকার পানি প্রবাহের তথ্য দিয়ে বন্যার হিসাব করে থাকে বাংলাদেশ।
এদিকে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেদনে বলা হয়, মৌসুমি বৃষ্টিপাতজনিত ভারী বর্ষণের প্রভাবে দেশের প্রধান নদ-নদীর পানির উচ্চতা বাড়তে পারে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আরও বেশ কয়েকদিন থাকবে। আর যেহেতু উজানে বেশ বৃষ্টি হয়েছে, সে কারণে ওই পানি নেমে এলে নদীর পানির উচ্চতা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।’
তবে ফারাক্কার কারণে বন্যার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক। তিনি বলেন, ‘ফারাক্কার কারণে কোনও বন্যা হবে না। পানি নেমে যাওয়ার সময় নদীর পানি বাড়বে। কিন্তু সেটা এত বেশি নয় যে তাতে বন্যা হতে পারে। আমাদের নদীগুলোতে যথেষ্ট পানি ধরে। ফলে নদী ফুলেফেঁপে উঠবে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি ফারাক্কার কারণে হবে না।’