আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তান ও ভারত পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে পুরো বিশ্বকেই এর ফল ভোগ করতে হবে। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন। ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে ভাষণ দেন ইমরান খান। তার বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়জুড়ে ছিল অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলসহ অঞ্চলটিতে ভারতের নীতির কঠোর সমালোচনা।
তিনি বলেন, যদি দুটি দেশের মধ্যে প্রচলিত যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সাত গুণ ছোট একটি দেশের সামনে দুইটি বিকল্প থাকে। হয় আত্মসমর্পণ নয়তো শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া। যখন কোনও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ শেষ অবধি লড়াই চালিয়ে যায় তখন এর পরিণাম মানচিত্রের সীমানা ছাড়িয়ে যায়। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের লড়াইয়ের প্রভাব তখন পুরো দুনিয়ার ওপর পড়ে। সমগ্র বিশ্বকে এর ফল ভোগ করতে হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি জাতিসংঘের জন্য একটি পরীক্ষা। এই সংস্থা কাশ্মিরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের গ্যারান্টি দিয়েছিল। এখন আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বরং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। এজন্য সবার আগে ভারতকে দখলকৃত কাশ্মিরে আরোপ করা কারফিউ তুলে নিতে হবে। সব বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই কাশ্মিরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিতে হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা কাশ্মিরের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ দ্রুত প্রত্যাহার চায়। পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়াশিংটনের এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কর্মকর্তা অ্যালিস ওয়েলস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দেখতে চাই—বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া আর আটককৃতদের মুক্তি।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই পদক্ষেপকে ঘিরে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। এখনও আটক রয়েছেন সেখানকার শত শত নেতাকর্মী। অভিযোগ উঠেছে, এরপর থেকেই সেখানে সংবাদমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বেসামরিক মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় বাহিনী। নির্যাতনের শিকার হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ভারত। কাশ্মিরে ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কারের পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কও স্থগিত করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের প্রাক্কালে সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব বৈঠকের পর তৃতীয় বারের মতো ট্রাম্প জানান, কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কর্মকর্তা অ্যালিস ওয়েলস বলেন, উভয় পক্ষ চাইলে মধ্যস্থতায় রাজি আছেন ট্রাম্প। তবে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাইরের কোনও পক্ষের ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মিরে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার ও সেখানকার বাসিন্দাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ঘটনায় উদ্বিগ্ন। দিল্লির সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার একদিনের মাথায় শুক্রবার জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের নীতির সমালোচনায় সরব হন ইমরান খান। সূত্র: ডন, এনডিটিভি।