আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর জনাতঙ্কের মধ্যেই ভারতের আসামের দারাং জেলায় অন্তসত্ত্বা এক নারীসহ তিন বোনকে নগ্ন করে সারারাত থানায় অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ। ওই তিন নারীর ভাইয়ের সঙ্গে এক হিন্দু তরুণীর প্রেমের সম্পর্কের জেরেই তাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পেটে উপুর্যপরি লাথির কারণে এক নারীর ঘটনাস্থলেই গর্ভপাত হয়ে যায়।
গত ৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার খবর দুদিন আগে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। তিন বোনকে পুলিশি নির্যাতনের বেশ কিছু ছবিও ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে আসামসহ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
আসামের স্থানীয় এক পত্রিকার খবর মতে, গত ১০ সেপ্টেম্বর দারাং জেলা পুলিশ সুপারের নিকট নির্যাতনের শিকার মিনুয়ারা বেগম অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে একদল পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। পুলিশের আসা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। পুলিশকে তাদের আগমণের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা পিস্তল তাক করে কোনও প্রশ্ন করতে নিষেধ করে। তারপর আমার সঙ্গে বড় বোন সুনয়ারা বেগম ও ছোট বোন রুমেলা বেগমকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়।’
মিনুয়ারা বেগম আরো বলেন, ‘বুরহা পুলিশ ফাঁড়িতে তিন বোনকে নগ্ন করা হয়। তারপর এসআই মহেন্দ্র শর্মা ও এক নারী কনস্টেবল শরীরের বিভিন্ন অংশে বেদম মারতে থাকে। তাছাড়া তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এসআই। এ ঘটনা সম্পর্কে যেন থানায় অভিযোগ করতে না পারে তার জন্য পিস্তল দেখিয়ে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।’
‘পুলিশের নির্যাতনে কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী রুমেলা বেগম অজ্ঞান হয়ে যান। আরেক বোন সুনয়ারার পেটে লাথি মারার কারণে তার গর্ভপাত হয়। পরে হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হলেও তার সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
এ অভিযোগ সম্পর্কে দারাং জেলার পুলিশ সুপার অমৃত ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে তদন্ত শুরু করেছেন এবং একজন ডিএসপিকে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য নজর রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলাটি নথিভুক্ত করা হবে। আমরা মেডিকেল প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি।’
এদিকে ইতোমধ্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া অভিযুক্ত এসআই মহেন্দ্র শর্মা ও নারী কনস্টেবলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, তিন মুসলিম বোন মিনুয়ারা বেগম, সুনয়ারা বেগম ও রুমেলা বেগম এর ভাই রুকোল আলির সঙ্গে স্থানীয় এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ৬ সেপ্টেম্বর রুকোল আলি ও তার প্রেমিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এ খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকায় তাণ্ডব চালায় স্থানীয় গেরুয়া বাহিনী। অনেক খুঁজেও তাদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। পরে তাদের হদিস জানতে তিন বোনকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে রুকোল এবং তার প্রেমিকার সন্ধান মিললে তিন বোনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।