প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর ইউরিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১২ দিন মেরামতের পর ২৭ নভেম্বর কারখানাটি চালু করা হয়। এইদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে স্টার্ট আপ হিটার পাইপে ফাটল দেখা দেয়। এসময় বিকট শব্দে পাইপটি বিস্ফোরণে হাইড্রোজেন গ্যাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
যমুনা সার কারখানার সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জেলায় সারের চাহিদা পূরণের জন্য সরকারিভাবে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে মজুত রয়েছে ৪০ হাজার ৮১ মেট্রিক টন সার। যমুনা সার কারখানায় দু’টি নিজস্ব গুদাম রয়েছে। এই গুদাম দু’টির ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার মেট্রিক টন। বাকি ২৮ হাজার ৮১ মেট্রিক টন সার প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বাইরে স্তূপ করে রাখা সারের বস্তা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও গলে জমাট বেঁধে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমদানি করা এই বিপুল পরিমাণ সার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরকার যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই দুর্ভোগে পড়েছেন বিসিআইসির ডিলারসহ কৃষকরা।
বিসিআইসি’র ডিলার সরকার আবুল হোসেন, ওসমান গণিসহ অনেকেই জানান, তিন মাসের বেশি সময় মজুত রাখলে বস্তার ভেতরে পঁচে-গলে ও জমাট বেঁধে সারের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তারা আরও বলেন, খুচরা বিক্রেতাসহ কৃষকেরা জমাট বাঁধা নষ্ট সার নিতে চান না।
একই অভিযোগ করেন জামালপুর জেলা ট্রাক ও ট্যাংক লরি মালিক সমিতির তারাকান্দি শাখার সভাপতি আশরাফুল আলম মানিক। তিনি বলেন, ‘আমদানি করা ইউরিয়া সারের মান অত্যন্ত খারাপ। ট্রাকে তোলার সময় অনেক বস্তা থেকে পানি পড়ে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ির আরাম নগরের বাসিন্দা কৃষক হুরমুজ আলী, সাতপোয়ার বাসিন্দা আব্দুল করিম মণ্ডল চরপলিশা বেতমারী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক বেলায়েত মিয়া, রফেত মণ্ডল বলেন, এ বছর জামালপুর জেলাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবেন তারা। এসময় বস্তা পচা, জমাট বাঁধা সার ক্ষেতে ছিটানো খুবই কঠিন হবে। তাই সঠিক সময়ে কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী সার না পেলে তাদের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে সার আমদানিতে বিঘ্ন ঘটলে, অথবা যমুনা সার কারখানা উৎপাদনে যেতে না পারলে, ১৯ জেলায় সার সংকট দেখা দিতে পারে।
খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় সার রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ওয়ায়েছুর রহমান বলেন, ‘কয়েক মাস সার রাখা হলে নিচের কিছু বস্তা নষ্ট হতে পারে। সার জমাট বেঁধে গেলেও এর গুণগত মান নষ্ট হয় না। চলতি আমন মৌসুমের মিনি পিক মৌসুমের জন্য ১৯ জেলায় চাহিদা ১৪ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন। চাহিদানুযায়ী ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে।’ কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সার সরবরাহ নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন।