আগামী ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এমবিবিএস প্রথম বর্ষের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গ্রহণের জন্য প্রেসে প্রশ্নপত্র না ছাপানোসহ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, প্রশ্নপত্র প্রেসে ছাপানোর বদলে কম্পিউটারের বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি ও প্রিন্ট দেয়ার বিষয়টি এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় এবার প্রথম হলেও তারা ইতোমধ্যে ডেন্টাল, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভর্তি পরীক্ষায় এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফলতা এসেছে। গত বছর এমবিবিএস পরীক্ষা এ পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা থাকলেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রেসেই প্রশ্নপত্র ছাপা হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপা হলে বাইরের কমপক্ষে ১০-১৫ জন লোক প্রশ্নপত্র ছাপা, বাঁধাই ও সেলাইয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। এ সব কারণেই আমরা প্রেসের বদলে কম্পিউটার সফটওয়্যারে প্রশ্নপত্র ছাপানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য পৃথক প্রশ্নপত্র ছাপা হবে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, আগে প্রতি বছর চার সেট প্রশ্ন প্রণয়ন করা হতো। চার সেট প্রশ্ন ভিন্ন হলেও যেকোনো একটি সেটের প্রশ্ন ও উত্তর একই হতো। কিন্তু এ বছর যতসংখ্যক পরীক্ষার্থী তত সেট প্রশ্ন ছাপা হবে। ১০০টি প্রশ্ন একই থাকলেও এক পরীক্ষার্থীর ১ নম্বর প্রশ্ন অন্য পরীক্ষার্থীর ৯৯ নম্বরে থাকতে পারে। বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রশ্ন প্রণয়ন হবে।
আগামী ৪ অক্টোবর দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নে ২৫, জীববিজ্ঞানে ৩০, ইংরেজিতে ১৫ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বর থাকবে।
এ ভর্তি পরীক্ষার জন্য গত ২৭ আগস্ট দুপুর ১২টা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। আবেদন গ্রহণ করা হবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদনকারীর সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সব ধরনের মেডিকেল কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়ালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এক বিশেষ সতর্কবার্তায় জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসাশিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত বিশেষ বার্তায় বলা হয়, শতভাগ স্বচ্ছতা, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কার্যক্রম চলছে।
১ সেপ্টেম্বর থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ। সুষ্ঠু পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল সজাগ রয়েছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তৎপর। প্রতারকচক্রের অনৈতিক প্রলোভনে সাড়া না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
পরীক্ষার দিন অংশগ্রহণকারী সব পরীক্ষার্থীকে সকাল সাড়ে ৯টার আগে কেন্দ্রে প্রবেশপত্র এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষার প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং রিফিল দেখা যায় এমন কালো বলপেনসহ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। সাড়ে ৯টার পর কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না এবং ঘড়ি ও মোবাইলসহ কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ওই বার্তায়, প্রতারকচক্রের কোনো অবৈধ কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমের টেলিফোন নম্বর (০২-৯৮৫৫৯৩৩) ও মোবাইল নম্বরে (০১৭৫৯-১১৪৪৮৮ এবং ০১৭৬৯-৯৫৪১৩৭) এবং নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই। পরীক্ষার্থীদের গুজবে বিশ্বাস না করে, প্রতারণার জালে পা না দিয়ে নিবিড়ভাবে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে নিজ যোগ্যতা প্রদর্শনের জন্য উপদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রেসে প্রশ্ন ছাপার বদলে কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র প্রণীত হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রেসে প্রশ্ন না ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে দেখা গেছে, অধিকতর স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে অল্প সময়ে প্রশ্নপত্র ছাপা যাবে। প্রশ্নপত্রও হবে ভিন্ন ভিন্ন। খুব বড় কোনো জটিলতা না দেখা দিলে এবার এমবিবিএসের প্রশ্ন প্রেসে ছাপা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।