২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৩

নর্দমার পানি ডিঙিয়ে ক্লাস!

নীলফামারী :  একটু বৃষ্টি হলেই জমে হাঁটুপানি। সেই পানির সঙ্গে শহরের নর্দমার পানি মিশে একাকার হয়ে জমে থাকে বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে। সেই নোংরা পানি পেরিয়ে প্রতিদিনই শিশুশিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। বিদ্যালয়টির পেছন দিকেই ময়লার ভাগাড়। সেখানে বেড়ে উঠছে নানা ঝোপ-জঙ্গল। সৃষ্টি হয়েছে মশার অভয়ারণ্য। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মাঝে মধ্যেই বিষধর সাপের দেখা মেলে। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের সাব-অর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই অবস্থার মধ্যেই চলছে পাঠদান।

সৈয়দপুর পৌর এলাকার প্রাণকেন্দ্রেই বিদ্যালয়টির অবস্থান। এর পূর্ব দিকে রেলওয়ে স্টেশন, পশ্চিমে রেলওয়ে হাসপাতাল। সামনে ক্রাইস্ট চার্চ গির্জা এবং একটু পেছনে মুর্তজা ইনস্টিটিউট।

সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়টির আশপাশে রেলওয়ের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বস্তি। বস্তিবাসীর পয়ঃনিষ্কাশনের পানি উপচে বিদ্যালয়টির মাঠে প্রবেশ করছে। এতে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি সুলতানা বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। ছেলেমেয়েরা নানা দুর্ভোগের মধ্যে ক্লাস করছে। নর্দমার পানিতে সয়লাব হচ্ছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। মাঝে-মধ্যে বিষধর সাপের আনাগোনাও দেখা যায়। সাপের ও মশার কামড়ের ভয়ে চরম উৎকণ্ঠায় আছি আমরা। মাঠে কাঁদাপানি জমে একাকার হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা ও খেলাধুলার কোনও সুযোগ নেই। জায়গার অভাবে অ্যাসেম্বলি করাও সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিষয় বেশ কয়েকবার স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরকে অবহিত করা হয়েছে, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাই লিখিতভাবে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়রকে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।’

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিঠু, সাহানা, ববির সঙ্গে কথা হয়। তারা বলে, ‘সাপ নিয়ে খুব ভয়ে আছি আমরা। আর দুর্গন্ধে ক্লাস করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এসব কারণে ঠিকভাবে লেখাপড়া করা যাচ্ছে না। আমরা দ্রুত এর একটা সমাধান চাই।’

অভিভাবক শাহানা বানু বলেন, ‘সন্তানকে ভয়ে ভয়ে স্কুলে পাঠাই। কখন কী হয় জানি না। পচা দুর্গন্ধময় পানি থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট করার জন্য পৌর কতৃপক্ষকে বারবার বলেও কাজ হয়নি। শিশুদের কষ্টের কথা শোনা ও সমস্যা দেখার কেউ নেই। বৃষ্টির পানি নেমে গেলেও, এখনও নেমে যায়নি ওই বিদ্যালয়ের মাঠের পানি।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মনসুর আলী জানান, ‘এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ মাসুদ, বিনোদন পাক্ষিক আনন্দ আলোর সম্পাদক ও নাট্যকার রেজানুর রহমান, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন। অথচ এই বিদ্যালয়টির এমন করুণ অবস্থা। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।’

এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিদ্যালয়ের মাঠে বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি করে দেব। আপাতত মাঠ ভরাট করার কাজটি করা হবে।’
এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া জানান, দ্রুত ময়লা-আবর্জনা অপসারণসহ বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাটের ব্যবস্থা করা হবে।

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯ ১২:৪১ অপরাহ্ণ