আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রেক্সিট ইস্যুতে পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার।
কোনো চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া প্রশ্নে মঙ্গলবার যে ভোটাভুটি হয় তাতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ২১ এমপি বিরোধী দলের কাতারে গিয়ে বসেন।
বিবিসি জানিয়েছে, হাউজ অব কমন্সের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ৩২৮ ভোট পড়ে, আর বিপক্ষে পড়ে ৩০১ ভোট। এর ফলে বিরোধী এমপিরা এখন চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট ঠেকাতে বিল আনতে পারবেন।
আগামী ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকর হওয়ার কথা। কীভাবে, কোন চুক্তিতে সেই বিচ্ছেদ কার্যকর হবে -তা নিয়েই আলোচনা চলছিল।
তবে এ বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো চুক্তি হোক বা না হোক, নির্ধারিত তারিখেই ব্রেক্সিট কার্যকরের ব্যাপারে অনড় ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
কিন্তু জনসন সরকারের ব্রেক্সিটনীতির বিরোধীরা মঙ্গলবার পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব আনেন, যাতে ব্রেক্সিট আরও পিছিয়ে দিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করে একটি বিচ্ছেদ চুক্তি চূড়ান্ত করার সময় পাওয়া যায়।
এদিকে ভোটাভুটিতে হেরে গেলেও প্রধানমন্ত্রী জনসন আবারও হুমকি দিয়ে বলেছেন, এমপিরা তার প্রস্তাবে সায় না দিলে তিনি আগাম নির্বাচনের পথে যাবেন।
আর বিরোধী দলীয় নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার বিলটি পাস করতে হবে প্রধানমন্ত্রী নতুন নির্বাচন ডাকার আগেই। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। এদের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই এবং এদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই।’
ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বিরাজ করছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে বসে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। তবে বৈঠকের আগেই এক সভায় বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে নিজ দলের যারা বিরোধিতা করবেন তাদের বহিষ্কার করা হবে।
ভোটাভুটির পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বরিস জনসন বলেছেন, তিনি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আনবেন। অক্টোবরে নির্বাচনের প্রচেষ্টা চালানো ছাড়া তার কিছু করার নেই। কারণ, দেশের জনগণকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও এখনই জনসন সরকারের পতন ঘটছে না। কেননা, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) ঠেকানোর বিষয়ে বিরোধী দলগুলো একমত হলেও বিকল্প সরকার গঠন নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিনকে প্রধানমন্ত্রী করা নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। তাঁর নিজ দলেও এ ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৩ জুন এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেন ভোটাররা।
কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় ব্রিটেনআলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭ রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে, সেসব বিষয়ে ব্রিটিশ এমপিরা একমত হতে পারেননি। ফলে ব্রেক্সিটের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।
তবে ইইউ’র বেঁধে দেওয়া সর্বশেষ সময় অনুযায়ী, বিচ্ছেদ প্রশ্নে ব্রিটেন কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারুক বা না পারুক, ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর হবে।
গত জুলাইয়ের শেষে থেরেসা মের হাত থেকে প্রধানমন্ত্রির দায়িত্ব বুঝে নেওয়া বরিস জনসন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে অবিচল। ব্রিটেনকে তিনি ‘নো ডিলের’ দিকেই নিতে চাচ্ছেন, যা নিয়ে বিরোধী দলের পাশাপাশি জনসনের নিজ দলেরও অনেকের আপত্তি রয়েছে।
এ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন বসে। চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ আটকাতে অধিবেশনের শুরুতেই সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব আনে বিরোধী দল। কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীসহ কনজারভেটিভ পার্টির মোট ২১ জন এমপি ওই প্রস্তাবের পক্ষে যোগ দেন।
এদিকে গতকালের ভোটে হারার পর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়, যারা দলের মতের বিরোধিতা করছে, তাদের পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে। তবে বহিষ্কার আর আগাম নির্বাচনের হুমকিতে বিদ্রোহী এমপিরা পক্ষে আসবে বলে আশা করছে জনসন সরকার।