সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর পিক টাইম ধরা হয়। তবে, এবার সেটি নাও হতে পারে। কারণ, চলতি মৌসুমে যেমন নির্ধারিত সময়ের আগেই ডেঙ্গু শুরু হয়েছে, তেমনি সময়ের আগে শেষও হয়ে যেতে পারে। এরপরও রোগীর সংখ্যা যেন না বাড়ে, সেজন্য কেবল নিদির্ষ্ট মৌসুম নয়, বছরের ৩৬৫ দিনই এডিস মোকাবিলায় কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তারপরও সেপ্টেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, তাহলে বেড়ে যাবে এডিস মশার পরিমাণ। একইসঙ্গে বাড়বে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও। তাই সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আগামী মাসকে মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনও কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে তা মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এডিস মশার ক্ষেত্রে বৃষ্টির ধরন ও বাতাসের গতিবেগ নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা। তিনি বলেন, ‘এগুলো এডিস মশার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এছাড়া, থেমে থেমে বৃষ্টিপাতও এডিসের জন্য দায়ী। আর প্রতিদিন অল্প অল্প বৃষ্টি ডেঙ্গু রোগের জন্য বড় ফ্যাক্টর।’
অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের যে আবহাওয়া পূর্বাভাস রয়েছে, সেখানে কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টি, মেঘলা আবহাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই, রোগী কমে আসার বিষয়টিকে স্থায়ীভাবে কমে আসা মনে না করে যদি পুরো সময়টা ডেঙ্গু মোকাবিলার কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তাহলেই কেবল আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এই রোগটি আর বাড়বে না। আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা যদি চলমান থাকে, তাহলে সেপ্টেম্বরে রোগী সংখ্যা বাড়বে না।’
সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন কিনা—এমন প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ঠিক পিক টাইম না। তবে, চলতি মাসের মতো থেমে থেমে যদি সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টি হয়, তাহলে এমন পরিবেশ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। বৃষ্টি হলেই এডিস মশার লার্ভা এডাল্ট। তখন একটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে আসলে এখন আর বিশেষ কিছু করার নেই, যে কার্যক্রম এখন রয়েছে, সেটাই অব্যাহত রাখতে হবে। গত কিছুদিন ধরেই রোগীর সংখ্যা কমে আসছে, এই কন্ট্রোলটাই যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। সেটা কেবল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়, বছরব্যাপী ধরে রাখতে হবে।’
আবহাওয়ার সঙ্গে কোনও ডেঙ্গু রোগের কোনও সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘আবহাওয়ার সঙ্গে এর যে সম্পর্ক, সেটা খুব বেশি ম্যাটার করে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘ঢাকার বাইরে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রধান ফোকাস হচ্ছে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয় হচ্ছে, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। সচেতনতার অংশ হিসেবে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে স্থানীয় মিউনিসিপিলিটি বিভাগ, পৌরসভা বা উপজেলা পর্যায়ে এই বার্তা পৌঁছানো যে, তারা যেন নিজ নিজ এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করে।’
এদিকে, ঢাকার বাইরে সেপ্টেম্বরকে পিক টাইম ধরে কোনও কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে চট্টগ্রামের পোর্ট হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালকে হাতে রেখেছি।’ ডেঙ্গু মোকাবিলায় তার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলেও জানান ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।