দেশজনতা অনলাইন : ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। ৭ জনের নামও পাওয়া গেছে। তবে গত এক বছরে তাদের কাউকে গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়নি।
মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোখলেসুর রহমান বলেন, মামলাটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে নিশ্চিতভাবে কোনও কিছু বলা সম্ভব নয়।
২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় হামলার শিকার হন বার্নিকাট। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। রাত ১১টার দিকে ফেরার সময় অতর্কিতে হামলা চালানো হয় তার গাড়িবহরে। একই সময় বদিউলের বাসায়ও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তবে হামলায় বার্নিকাট অক্ষত ছিলেন।
ঘটনার পরদিন (৫ আগস্ট) মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। পরে ১০ আগস্ট অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় এবং তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবি পুলিশের পশ্চিম বিভাগকে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার অভিযোগ আনা হয়। তবে এতে ঘটনার সময় রাষ্ট্রদূতকে নিরাপত্তা দিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত জুলাই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তখন তার কাছে বার্নিকাটের গাড়িতে হামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার ঘটনার সর্বশেষ অগ্রগতি জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
উপসচিব মল্লিকা খাতুনের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, মামলার তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাসেল, ফিরোজ, কাজল, রাজু, সাজু, আকাশকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিপ্লব নামে একজনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
পুলিশ অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, যথাসময়ে মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
তবে তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সরকার যে ঘটনার বিচার চায়, সেই ঘটনার বিচার হয়। যেটা চায় না, তার বিচার হয় না। এক বছরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, এমনকি আটকও করা হয়নি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা শুরুতে কথা বললেও পরে আর যোগাযোগ করেননি বলে জানান বদিউল। বলেন, ‘বার্নিকাটের গাড়িতে ও আমার বাড়িতে হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’ প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন বদিউলের বাসায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট ছাড়াও ড. কামাল হোসেন, তার স্ত্রী হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তখন রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিলো।
এ হামলার ঘটনায় করা অভিযোগে বদিউল বলেন, রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বার্নিকাট গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, তখন একদল দুর্বৃত্ত (সংখ্যা আনুমানিক ৩০-৪০ জন) হামলা করে। তারা বার্নিকাটের গাড়ির পেছন পেছন ধাওয়া করে ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পিস্তল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এসেছিল তারা। এ ছাড়া দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতেও হামলা চালায়।