অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ৪ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস করছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সিস্টেম লসের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দিলেও বিতরণ কোম্পানিটির এ হার তিন গুণের বেশি, ৬ দশমিক ১২। এ অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না।
বিইআরসি জানায়, তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৬ দশমিক ১২ ভাগ। তাদের গ্রহণযোগ্য সিস্টেম লস সর্বাধিক ২ ভাগ। এর বেশি সিস্টেম লস গ্যাসের মূল্যহারের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছ থেকে কোনোভাবেই আদায় করার সুযোগ নেই।
তিতাসসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বিতরণ কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ পেয়ে থাকে। এলএনজি আসার পর অন্য কোম্পানির মতো তিতাসও গ্যাসের সরবরাহ বেশি পাচ্ছে। শতকরা হিসাবকে গ্যাসের হিসাবে রূপান্তর করলে সিস্টেম থেকে হারিয়ে যাওয়া এই গ্যাসকে বিপুল পরিমাণই বলতে হবে।
হিসাব করলে দেখা যায়, বিদ্যমান ৬ দশমিক ১২ শতাংশে প্রতিদিন তিতাসের সিস্টেম লসে পড়ে ১৩৪ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু অনুমোদিত ২ ভাগ সিস্টেম লস হিসাব করলে তা দাঁড়ায় ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুটে। অর্থাৎ প্রতিদিন অতিরিক্ত ৯০ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিস্টেম লসে পড়ছে। কোথায় এই লস হচ্ছে তারও হিসাব কোম্পানিটি দিতে পারছে না।
জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা ছিল, এলএনজি সরবরাহের আগেই তিতাস সব অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ করবে। কিন্তু এখনও অপসারণের খবর দিয়ে আসছে তিতাস।
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, এখনও অবৈধ পাইপলাইন রয়ে গেছে বলেই এ ধরনের খবর দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অবৈধ পাইপলাইন অপসারণে তিতাসকে ধীরে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে তিতাস আর সেভাবে কাজ করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘যেখানে অবৈধ লাইন রয়েছে সেখানের ব্যবহারকারীরা তো গ্যাস ব্যবহার করে টাকা দিচ্ছে না। ফলে বিষয়টি সিস্টেম লস হিসেবে অন্তর্ভুক্তই হচ্ছে।’
সম্প্রতি তিতাস বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জ্বালানি বিভাগে যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানেও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক বলেছে, তিতাসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর সঙ্গে জড়িত। এরপর কোম্পানিটি নানা শুদ্ধিমূলক কর্মসূচিও হাতে নেয়। তবে এরপরও সিস্টেম লসের নির্দেশনা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা।
তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সিস্টেম লস কমাতে তিতাস বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মিটারিং ব্যবস্থা আপডেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ সংযোগ চিহ্নিতকরণ, বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম চলছে। হিসাব পদ্ধতির মডিফিকেশন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এসব কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী রদবদলও করা হচ্ছে।’
কবে নাগাদ সিস্টেম লস কমাতে পারবেন জানতেই চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক দিনে তো সম্ভব নয়। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।