২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:১৭

বাসাবাড়িতে এডিস মশা: অ্যারোসলকে কার্যকর বলা হলেও বিতরণে ধীরগতি

তবে সিটি করপোরেশন বলছে, নাগরিকদের পক্ষ থেকে যারাই আসছেন, কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অ্যারোসলগুলো বাসায় পৌঁছে দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

ডিএসসিসি বলছে, এডিস মশার উৎপত্তিস্থলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নগরবাসীর বাসাবাড়ি। তিন দিনের বেশি জমে থাকা স্বচ্ছ পানি, বাসার ছাদ, ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, বেসিন, কমোড ও এসি বা রেফ্রিজারেটর পানিতে জন্মায় এই মশা। এই স্থানগুলোর বেশিরভাগই থাকে বাসাবাড়ির ভেতরে। কিন্তু প্রতিটি বাসার ভেতরে গিয়ে এসব স্থানের মশা ধ্বংস বা ওষুধ প্রয়োগের সুযোগ থাকে না। তাই করদাতাদের মধ্যে বিনামূল্যে মশার অ্যারোসল বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকদের বাসাবাড়ি থেকে কিছুটা হলেও ডেঙ্গু মশা নিধন সম্ভব হবে বলে মনে করছে ডিএসসিসি।

গত মাসের শেষে দিকে অ্যারোসলের ক্যান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন থেকে বিভিন্ন লটে অ্যারোসলগুলো এনে ডিএসসিসির গুদামজাত করা হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিতরণ করা হচ্ছে। গত ২৯ জুলাই ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে অ্যারোসলের ক্যান বিতরণের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সেদিন সুরিটোলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতে স্প্রের কার্টন তুলে দেন তিনি।

ডিএসসিসি আরও জানিয়েছে, এরই মধ্যে সংস্থাটির আওতাধীন এক লাখ ৬৩ হাজার হোল্ডিং মালিক, ৭৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৭৭৫টি মসজিদের জন্য দুই লাখ মশার অ্যারোসল ক্যান কেনা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ৩০ হাজারের মতো ক্যান বিতরণও করা হয়েছে। এসিআই কোম্পানির উৎপাদিত ৩২০ টাকা দামের ক্যানগুলো সরকারি ক্রয়নীতি অনুযায়ী ভ্যাট-ট্যাক্সসহ প্রতিটি কেনা হয়েছে ২৮৮ টাকায়। প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় দুই লাখ ক্যান কেনা হলেও প্রয়োজনে আরও কেনা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই অ্যারোসলের ক্যানগুলো শুধু করদাতা হোল্ডিং মালিকরা পাচ্ছেন। সাধারণ ভাড়াটিয়ারা পাচ্ছেন না। সবাইকে অ্যারোসল ক্যান দিতে গেলে কমপক্ষে ৬ লাখ ক্যান লাগবে এবং এজন্য কমপক্ষে ১৮ কোটি টাকা খরচ হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু করপোরেশনের এখাতে এতো বরাদ্দ নেই। সরকার যদি এজন্য বিশেষ কোনও বরাদ্দ দেয়, তাহলে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নেবে বলেও জানানো হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার অ্যারোসল ক্যান বিতরণে ধীরগতির অভিযোগ অস্বীকার করে  বলেন, ‘আমরা নাগরিকদের বাসা বাড়িতে মশা নিধনের জন্য অ্যারোসল ক্যান বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে ৭৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৭৭৫টি মসজিদে বিতরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ক্যান বিতরণ করা হয়েছে। আমরা এজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নগরবাসীকে জানিয়ে দিয়েছি, তারা যাতে ক্যানগুলো সংগ্রহ করে নেন।’

তিনি জানান, নাগরিকরা এসে সংগ্রহ না করার কারণে এখনও অ্যারোসল ক্যান রয়ে গেছে। আমরা এটাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারি কিনা, সেটা নিয়ে ভাবছি। বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিলে দ্রুত বিতরণ শেষ হয়ে যাবে।

খিলগাঁও তারাবাগ ২নং গলির ১৮নং বাসার বাসিন্দা মোবারক হোসেন  বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে সিটি করপোরেশনের জোন অফিসে যোগাযোগ করি। ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি দেওয়ার পর তারা একটি অ্যারোসল ক্যান দিয়েছে। গত তিন দিন ধরে সকাল বিকাল বাসায় অ্যারোসল দিচ্ছি। এখন মশা দেখতে পাচ্ছি না। একটু নিরাপদ মনে হচ্ছে।মোহাম্মদপুরের বাড়ি মালিক আলহাজ আবুল খায়ের  বলেন, ‘কই? আমরা এখনও পাইনি। গতকাল জোন অফিসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বলেছে ট্যাক্সের রশিদ নিয়ে যেতে। এ কারণে নিতে পারিনি। সিটি করপোরেশনের কাছে তো ট্যাক্সের রশিদ রয়েছে। তাদের কর্মীদের দিয়ে তো প্রতিটি ক্যান ট্যাক্সধারীদের বাসায় পৌঁছে দিতে পারেন। তিনশ’ টাকার একটা ক্যানের জন্য নাগরিকরা তো নাও আসতে পারে।’

প্রকাশ :আগস্ট ১৮, ২০১৯ ১২:৩১ অপরাহ্ণ