দেশজনতা অনলাইন : মা ডেঙ্গু আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি। এর মধ্যে বাসায় থাকা ১০ মাস বয়সী শিশুর গায়ের তাপমাত্রা কিছুটা গেছে বেড়ে। আতঙ্ক ভর করে পরিবারে। শিশুটিকে স্বজনরা নিয়ে যান ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা জানান, বাচ্চাটিও ডেঙ্গু আক্রান্ত।
কিন্তু শিশুর শারীরিক অবস্থা বলছিল না, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। পরীক্ষার রিপোর্টেও জানানো হয়, রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা চার লাখ ৯০ হাজার। সব মিলিয়ে ইবনে সিনার পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ হয় বাবার। তিনি অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যান শিশুটিকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির ডেঙ্গু হয়নি। এখন শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ।
চলতি বছর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর কারণে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। গা গরম হলেই মানুষ আতঙ্কে ছুটছে হাসপাতালে।
এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর ডেঙ্গু ধরা পরার তথ্য দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু
ধরা পড়ার সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এই অসামঞ্জস্য কেন, তার কোনো জবাব নেই কারও কাছে। তবে এর মধ্যে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে প্রমাণ মিলেছে রক্ত পরীক্ষা না করিয়েই প্রতিবেদন দেওয়ার।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই দয়াগঞ্জের ইবনে সিনা হাসপাতালে সাধারণ জ্বরে ভোগা শিশুকে ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে ঘোষণা করার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেল।
শিশুটির নাম তারাজ। বাসা রাজধানীর গোড়ানে। মা খাদিজা বেগম গত ১০ আগস্ট থেকে ডেঙ্গু নিয়ে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে ভর্তি। এর আগে জ্বর হয়েছিল শিশুটির। কিন্তু পরে সে ভালোও হয়ে যায়।
মা হাসপাতালে থাকার সময় ১৩ আগস্ট তারাজের গা আবার কিছুটা গরম হয়। স্বজনদের পরামর্শে বাবা আবু সালেহ তার সন্তানকে দয়াগঞ্জের ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যান। করা হয় রক্ত পরীক্ষা। পরদিন রিপোর্টে বলা হয়, তারাজ ডেঙ্গু আক্রান্ত।
কোলের শিশুকে নিয়ে শুরুতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বাবা সালেহ। কিন্তু শিশুটির মধ্যে ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণই ছিল না। গাও আর গরম ছিল না তখন। তাই সন্দেহ জাগে মনে। ছেলেকে নিয়ে যান তার মা যেখানে ভর্তি, সেই আসগর আলী হাসপাতালে। সেখানে আবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এবার যে রিপোর্টে দেখা যায়, শিশুটি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নয়।
ঢাকা টাইমসকে সালেহ বলেন, ‘চলতি মাসের পাঁচ তারিখে তারাজের জ্বর হয়েছিল। একজন বিশেষজ্ঞ পেডিয়াট্রিক দেখালে তিনি ওষুধ দেন, পরে জ্বর ভালো হয়ে যায়। এরই মধ্যে তারাজের মা ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। ছেলেরও জ্বরের ভাব দেখে দিশেহারা হয়ে পড়ি। ইবনে সিনায় পরীক্ষা করে জানলাম ছেলেরও ডেঙ্গু হয়েছে।’
দ্বিতীবার পরীক্ষা কেন করালেন- এমন প্রশ্নে আবু সালেহ বলেন, ‘তারাজের জ¦র থাকলেও ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো প্রকট ছিল না। আমার কাছে সন্দেহ হলে আমি আসগর আলীতে পরীক্ষা করাই। তাদের আগে ডেঙ্গু পরীক্ষার রেজাল্টও বলেছি। তবে তারা জানালেন তারাজের ডেঙ্গু হয়নি।’
কয়টা টাকা আদায়ের জন্য ইচ্ছা করে তার শিশুকে ডেঙ্গু রোগী বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে সন্দেহ বাবা সালেহের। তিনি বলেন, ‘একটি ১০ মাসের শিশুকে নিয়েও এরা ব্যবসা শুরু করেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা কোথায় যাব? ডেঙ্গু ধরা পড়লেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে- এমন কুমতলব থেকেই এটা ইবনে সিনা করেছে।’
সালেহের ধারণা, এটা কেবল তার সন্তানের ক্ষেত্রেই হয়নি। অন্যদের ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছে ইবনে সিনা। ডেঙ্গু সাজিয়ে রোগী ভর্তি করিয়েছে তারা।
তারাজের বিষয়টি নিয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবসস্থাপক তৌফিক এলাহী রক্ত পরীক্ষার আইডি জানতে চান। বলেন, ‘বিস্তারিত জেনে জানানো হবে।’
ইবনে সিনার সহকারী ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে নাসির উদ্দিন নামে একজন তিনি বলেন, ‘আমরা এই রোগীর ব্লাডটি আবার পরীক্ষা করিয়ে দেখেছি ডেঙ্গু পজিটিভ এসেছে।’
দ্বিতীয়বার পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা পেলেন কোথায়- এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা রোগীর স্যাম্পল রেখে দিই। সেখানে থেকেই বের করে পরীক্ষা করিয়েছি।’
কত দিন এই রক্ত রাখেন- এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অনেক দিনই রেখে দিই।’
আসগর আলী হাসপাতালে যোগাযোগ করে তারাজের পরীক্ষার আইডি নম্বর জানালে পরীক্ষা করে হেল্পডেস্ক থেকে নিশ্চিত করা হয়, শিশুটির ডেঙ্গু হয়নি। তাদের পরীক্ষার ফলাফল সঠিক।