আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাজ্য হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (৩৭০ ধারা) বাতিলের পর সেখানে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রাজ্যের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনা সদস্যরা। বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ এবং অফিস-আদালত।
ল্যান্ডলাইন, মোবাইল এবং ইন্টারনেট যোগাযোগও বন্ধ থাকায় একরকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি ও এনডিটিভি।
কেউ জানে না সেখানে কি ঘটতে চলেছে। রাজ্যের লোকজন বেশ উদ্বিগ্ন। অন্য এলাকায় থাকা ওই রাজ্যের লোকজন স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
দিল্লিতে পড়তে আসা এক ছাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, তিনি রাজ্যের পুলিশ স্টেশনে টেলিফোন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে বিয়য়টি নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের লোকসভা। মঙ্গলবার সকালে লোকসভায় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পেশ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এরপর সংসদে কংগ্রেসের এমপি অধীর চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম ভেঙে কাশ্মীরকে ভাগ করেছে কেন্দ্র সরকার।
অধীর চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে হয় না, আপনি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কথা ভেবেছেন। আপনি সব নিয়ম ভেঙেছেন এবং রাতারাতি একটি রাজ্যকে ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছেন।
অমিত শাহর কাছে প্রশ্ন রেখে অধীর বলেন, ‘আপনি বলছেন, এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি (সিমলা চুক্তি, লাহোর চুক্তি) থাকা সত্ত্বেও এটি কীভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়? কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো। কাশ্মীরকে এখন কয়েদখানা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় অমিত শাহ বলেন, ‘সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীর দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জম্মু ও কাশ্মীরে কোনও আইন তৈরি করতে সংসদকে কেউ বাধা দিতে পারে না। রাষ্ট্রপতির ৩৭০ ধারা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে। কাজেই কোনও নিয়ম ভাঙা হয়নি। আমরা কাশ্মীরের জন্য মরতেও পারি।’
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ও রাজ্যকে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করাটা গণতন্ত্রকে হেনস্থার সামিল বলে মন্তব্য করেন অভিনেতা-রাজনীতিক কমল হাসানের। কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তকে পশ্চাদগামী ও স্বৈরতন্ত্র বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
এদিকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, নীতিন গডকড়ি, জেপি নাড্ডা ও প্রহ্লাদ যোশির মতো নেতারা ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা বাতিলের কথা ঘোষণা করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদ জানিয়ে কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিরোধীরা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তের জেরে অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সোমবার কাশ্মীর উপত্যকায় বাড়তি আট হাজার আধাসামরিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে জম্মু ও কাশ্মীরে অতিরিক্ত ৩৫ হাজার সেনা মোতায়েন করে দিল্লি। আর নিরাপত্তা শঙ্কার কারণ দেখিয়ে অমরনাথের পথে থাকা হিন্দু পুণ্যার্থী ও কাশ্মীর উপত্যকায় থাকা পর্যটকদের তাৎক্ষণিকভাবে ফিরে যাওয়ারও পরামর্শ দেয় মোদির সরকার।
এরপর রোববার রাত থেকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাসহ কাশ্মীরের শীর্ষ নেতাদের গৃহবন্দি করা হয়। পরে সোমবার ওই দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।