২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৩৩

খেতে খেতে জানা যাবে ঢাকার ইতিহাস

দেশজনতা অনলাইন: পুরান ঢাকার প্রতিটি মহল্লায় রয়েছে ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্পর্শ। এর প্রতিটি গলি, ঘুপচি কিংবা মোড়ের সঙ্গে রয়েছে ইতিহাসের যোগসূত্র। সেই ইতিহাসের খোঁজ এবার মিলবে খাবার হোটেলে বসে। খেতে খেতে জানা যাবে ঢাকার ইতিহাস।

পুরান ঢাকার ৩৩/এ, পাটুয়াটুলি বাবুর্চিখানা। এটি মূলত হোটেল। হোটেলের বাইরে সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারা কঠিন ভিতরের আয়োজন সম্পর্কে। অথচ ভিতরে ঢুকলেই গ্রাহক পাবেন ঢাকার ইতিহাসের খোঁজ। কেননা হোটেলের চার দেয়ালে যত্ন করে টানিয়ে রাখা আছে ইতিহাসের সাক্ষী পুরনো অনেক ছবি। ছবিগুলো ঢাকার প্রাচীন সময়ের কথা আপনাকে মনে করিয়ে দিবে। আপনি সহজেই ধারণা করতে পারবেন কেমন ছিল আমাদের এই আদি ঢাকা।

সাধারণত হোটেলের দেয়ালে নানারকম খাবারের ছবি রাখা হয় গ্রাহককে আকৃষ্ট করার জন্য। ‘বাবুর্চিখানা’ এর ব্যতিক্রম। এখানে ঐতিহাসিক ছবির ভিড়ে খাবারের ছবি চোখেই পড়ে না। অবশ্য হোটেলের রান্না ঘরে গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করছে মুখরোচক লোভনীয় সব খাবার। কিন্তু খাবার অর্ডার দেয়ার আগেই আপনি বিস্মিত হবেন সতেরো, আঠারো এবং উনিশ শতকের ছবি দেখে। আপনি কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যাবেন। এরপর চাইলে গরম ধোঁয়া ওঠা খাবার সামনে রেখে নিতে পারবেন ইতিহাসের পাঠ। ঢাকা শহরের শতাব্দী প্রাচীন অসংখ্য ছবি রয়েছে বাবুর্চিখানায়! ভিতরের দুইপাশের দেয়ালজুড়ে শুধু ছবি এবং ছবি। খাবার টেবিল ঘেঁষে দেয়ালে সাজানো এসব ছবিতে ফুটে উঠেছে ঢাকার ইতিহাস।

কয়েকশ ছবির সবগুলোই ঢাকাকে কেন্দ্র করে। এসব ছবিতে ঢাকার ঐতিহ্যের যেমন ছাপ রয়েছে, তেমনি অবকাঠামোগত পরিবর্তনের চিত্রও উঠে এসেছে। পুরনো চিড়িয়াখানা, পুরনো রেল স্টেশন, হারিয়ে যাওয়া এমন অনেক স্থাপনার ছবি রয়েছে। ঢাকা গেট, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, রূপলাল হাউস, ১৮ শতকের নিউমার্কেট, তৎকালীন সদরঘাট, বাদামতলী ঘাট, লোহারপুল, ধোলাইখাল, মিডফোর্ড, পুরান ঢাকার মহল্লার দৃশ্য, লালকুঠি, ১৮ শতকের ঢাকার রাস্তা, বায়তুল মোকাররম মসজিদের পূর্বের অবস্থা, বর্ধমান হাউসের প্রাথমিক অবস্থা, বাহাদুর শাহ পার্কসহ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর পুরনো চিত্র রয়েছে অসংখ্য। এসব ছবির সঙ্গে বর্তমান ঢাকার ব্যবধান অনেক।

হোটেলে খেতে আসা সামিউল জানালেন, কেউ যদি ঢাকার ইতিহাস খুব সংক্ষেপে এক জায়গায় দেখতে চায় সে যেন এই হোটেলে আসে। ভিতরে ঢুকলেই মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যাবে। হোটেলের ম্যানেজার রিপন মিয়া জানালেন, বছরছয়েক আগে হোটেলটিকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। তখন মহাজন রেজাউল হোসেন নিজের আইডিয়ায় ছবিগুলো সংগ্রহ করে এভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি আরো জানান, মালিকের বাড়ি বিক্রমপুর; কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পুরান ঢাকায় থেকেছেন। ঢাকাকে তিনি অসম্ভব ভালোবাসেন। তাই বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকার পুরনো ছবি সংগ্রহ করেছেন। তিনি নিজে যেমন ঢাকাকে ভালোবাসেন, তেমনি তার চাওয়া মানুষ ঢাকার ইতিহাস জানুক। সে কারণেই ঢাকার কয়েকশ ছবি দিয়ে তিনি হোটেল সাজিয়েছেন।

প্রকাশ :আগস্ট ৫, ২০১৯ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ