চলতি বছরে রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। আর জ্বর হওয়া মাত্রই হাসপাতালে গিয়ে সবাই নিশ্চিত হতে চেষ্টা করছেন তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না। এ কারণে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে পরীক্ষার সংখ্যা।
একটি পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যায় আতঙ্ক কী ধরনের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যত মানুষের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে, তার ১০ থেকে ২০ গুণ মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন রক্ত। বেসরকারি হাসপাতালেও যত মানুষের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে, তার চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন রক্ত।
ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বেশ কিছু রি-এজেন্ট এবং কিট দরকার পড়ে। আর স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বলে বেড়ে গেছে এই কিট ও রি-এজেন্টের চাহিদা। পাইকারি দোকানগুলো কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এরই মধ্যে দেশের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে নতুন করে আমদানির বড় চালান এখনো আসেনি। সরকারি উদ্যোগে কিট আমদানি হলেও সেগুলো কেবল সরকারি হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সংকটে পড়ে যাচ্ছে বেসরকারি চিকিৎসালয়।
এই পরিস্থিতিতে আমাদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা সুযোগ দিচ্ছেন। যার কাছে মজুদ আছে, তাদের কেউ দুই বা তিনগুণ বা তার চেয়ে বেশি দাম হাঁকছেন বলে তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে আবার সরকার রক্ত পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফি বেঁধে দিয়েছে। বেশি নিলে করা হচ্ছে বড় অংকের জরিমানা। তাই রোগীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিতে পারছে না হাসপাতাল ও রোগ পরীক্ষাগারগুলো।
রোডের বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন মার্কেটে ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের এক দোকানের বিক্রেতা জানান, তার কাছে এসডি রেপিড টেস্ট নামের একটি কিট আছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি। একশটি নিলে রাখতে পারবেন ৩৬০ টাকা। আর একশটির বেশি নিলে ৩৫০ করে রাখতে পারবেন।
আরেক বিক্রেতা জানান, এই কিটটি কোরিয়ান। যে কারণে এর দাম বাজারে থাকা অন্যগুলোর তুলনায় বেশি। সাধারণ কিটগুলো এখন কত করে বিক্রি হচ্ছে- জানতে চাইলে এই দোকানি বলেন, ‘যেগুলোর দাম একশ বা ১২০ টাকা, সেগুলো দুইশ বা ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘কিটের মূল্য বেশি রাখার অনেক খবর আমাদের কাছে এসেছে। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আমরা এসব বিষয়ে পদক্ষেপে নিতে পারি। দুঃখজনক হলো যারা এসব কিট কিনে নিয়ে যান তারাও এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ করতে চান না। এমনকি তাদের কাছে জানতে চাইলেও অভিযোগ করনে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমাদের কাজগুলো সহজ হতো। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’
‘তবে আমরা নানা সোর্স থেকে এসব বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছি। অভিযানও অব্যাহত আছে।’
মেডিকেল এসোসিয়েশেনের সার্জিক্যাল মার্কেটের ব্যবসায়ী তানভীর বলেন, ‘এখন এসব কিট সবার স্টকে নেই। যাদের আছে তারা প্রতিটাতে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছে। আগে যে কিটের দাম ছিল একশ টাকা এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে একশ পঞ্চাশ টাকায়।’
অতিরিক্ত মূল্য রাখার কারণ জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন অনেকেই নতুন করে এসব প্রোডাক্ট আনছেন সেক্ষত্রে বাই এয়ারে আনতে খরচ বেশি হচ্ছে যে কারণে বেশি মূল্য নিচ্ছে।’