সরেজমিনে বড়স্টেশন মাছ বাজারে দেখা গেছে, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রাকভর্তি হয়ে সাগরের ইলিশ আসছে বাজারে। মাছ আড়তে নামানোর পর বাছাই করে বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকে মাছ কিনে লঞ্চ, ট্রেন ও সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে মাছ কিনতে দল বেঁধে ব্যবসায়ীরা আসছেন। ক্রেতারা বলছেন, ইলিশের আমদানি বাড়লেও চাঁদপুরে মাছের দাম খুবই বেশি।
ইলিশ কিনতে কুমিল্লা থেকে আসা জিসান বলেন, ‘আমরা জানি, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। তাই এখানে ইলিশ কিনতে এসেছি। মনে করেছিলাম এখানে কম দামে ইলিশ পাবো। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম হিউজ দাম।’জহিরুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, ‘নোয়াখালী থেকে এখানে এসেছি ইলিশ কিনতে। ভেবেছিলাম এখানে দাম কম হবে। কিন্তু দেখলাম নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরের থেকে এখানে ইলিশের দাম বেশি।’
ঢাকা থেকে আসা তুহিন বলেন, ‘চাঁদপুর ইলিশের জন্য খুব প্রসিদ্ধ। তাই এখানে মাছ কিনতে এসেছি। ভেবেছিলাম এখান থেকে অনেক মাছ কিনে নেবো। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় ১২০০ টাকা কেজিদরে মাত্র ৫ কেজি মাছ কিনেছি।’
আড়ত শ্রমিক মিজান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে হাতিয়া, চরফ্যাশন, ভোলা থেকে মাছ আসছে। মাছ এলে আমাদের কাজ হয়, মাছ না এলে আমাদের কাজ হয় না।’
আরেক শ্রমিক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আগের থেকে মাছ বেশি, তবে দাম কম না। যেগুলো ভালো মাছ সেগুলোর দাম বেশিই। এছাড়া চাঁদপুরে দাম সবসময় একটু বেশি থাকে।’
ঘাটের আরেক শ্রমিক আজাদ বলেন, আগের থেকে মাছ মোটামুটি ভালো আসছে। আমরাও ভালো কাজ করছি। এরকম মাছ পড়লে আমরা ডাল-ভাত খেতে পারবো।
আড়ত ম্যানেজার আবুল হোসেন বলেন, ‘হাতিয়া, সন্দ্বীপের কিছু মাছ আসছে। এগুলোর দাম কিছুটা কম। কিন্তু চাঁদপুরের নদীতে মাছ অল্প পাচ্ছে। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম অত্যন্ত বেশি। এখনও এককেজি সাইজের মাছ ১৪০০ টাকা কেজি।’
আড়তদাররা জানান, বর্তমানে চাঁদপুরের বাজারে ২০০-৫০০ গ্রামের ইলিশের মণ ১৮-২০ হাজার টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৩২ হাজার টাকা এবং প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। এককেজি থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪৫-৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এককেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। আর দেড়কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা দরে।আড়তদার মতিন পাটওয়ারী বলেন, ‘চাঁদপুরের লোকাল কোনও মাছ আমাদের এখানে নেই। আমাদের এখানে সব সাগরের ইলিশ। চাঁদপুরে অল্প পরিমাণে যে মাছ আসছে সেগুলোর দাম অনেক বেশি। গতকালও দুই কেজি ওজনের একটি মাছ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মণ দরে।’
তিনি বলেন, ‘মাছ কেনার সময় দেখে নিতে হবে। কারণ, সাগরের মাছের বডি একটু লালচে হয়। আর চাঁদপুর অঞ্চলের নদীর মাছ সাদা টাইপের হয়। এটিকে বলে রুপালি ইলিশ।’আড়তদার ইমান গাজী বলেন, বর্তমানে মাছ যা আসছে বেশির ভাগই হাতিয়ার মাছ। লোকাল মাছ নেই।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, চাঁদপুরের ২৫টি ছোট-বড় মাছঘাটে ইলিশের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। প্রতিদিন বড়স্টেশন মাছঘাটে এক থেকে দেড় হাজার মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। কয়েকদিন পর ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে। তখন দাম আরও কমবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বলেন, কিছু দিনের মধ্যেই ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে। ঢলের ঘোলা পানি নামা শুরু করেছে। দ্রুতই মাছ সাগর থেকে নদীতে আসা শুরু করবে। তখন চাঁদপুর অঞ্চলেও ইলিশ ধরা পড়বে।