২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:২১

আমার বাসার পাশের ড্রেন কখনোই পরিষ্কার দেখিনি: মির্জা ফখরুল

দেশজনতা অনলাইন : রাজধানীর অলিগলি পরিষ্কার না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমি যে বাসায় থাকি, তার পাশেই একটা বড় পাকা ড্রেন আছে। যা পরিষ্কার করতে কখনোই দেখিনি। আর মশার ওষুধ যারা দেন, তাদের গত দেড় মাসেও আমি দেখিনি। ঢাকা শহরে এই ব্যাপারটা সবাই জানে।’ শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে তিনি অভিযোগ করেন।এর আগে, গত শুক্রবার (২ আগস্ট) রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী দেখতে গিয়ে জরুরি অবস্থা জারি ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি  আহ্বান জানিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।  তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে  শনিবার (৩ আগস্ট) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপির জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা দরকার।

বিএনপির মহাসচিব তার গত শুক্রবার দেওয়া জরুরি অবস্থা জারি বিষয়ক দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, তার এই বক্তব্য নিয়ে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আমার একটা বক্তব্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। সেটি জরুরি অবস্থার বিষয়। আসলে এটি ওইভাবে আমি ঠিক বলতে চাইনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছি, তাহলো আপদকালীন জরুরি ব্যবস্থা।’

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু একটা বড় রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে যেটা মোকাবিলায় আমি আপদকালীন জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে জরুরি অবস্থার কথাটা বলেছিলাম। আসলে এটার মিনিংটা হচ্ছে, বড় আপদ বলে আপদকালীন জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি কথাটা বলেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়া এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বক্তব্যগুলো মিলিয়ে এটা একটা লেজেগোবরে তৈরি করে ফেলেছে সরকার। তারা এই সমস্যা সমাধান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা এখন এত বড় আকার ধারণ করেছে যে, এটা এখন ৬৪ জেলায় চলে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ব্যবস্থা দরকার ছিল, সে ব্যবস্থা সরকার নিতে পারেনি। অর্থাৎ মশা মারার জন্য যে ওষুধ যেটা, তারা আনতে পারেনি এবং এত অল্প সময়ের মধ্যে আমদানি করার সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠকশেষে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব রাখছি যে সেটা হচ্ছে, সরকার ডেঙ্গু চিকিৎসায় জন্য প্রয়োজনীয় ভুর্তকি দেবে। জনগণের জন্য ডেঙ্গুর পরীক্ষার ব্যবস্থা বিনামূল্য করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার এত টাকা খরচ করতে পারে বিভিন্ন সেক্টরে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল কোটি কোটি টাকা জমা হয়, সেটা দেখা যায় যে বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য চলে যায়, তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ যখন বিপদে পড়েছে, তখন তাদের জন্য এই অর্থ (ত্রাণ তহবিলের) ব্যবহার করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। সরকারের উচিত হবে, এ বিষয়ে আরও ফান্ড জোগাড় করে সেখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য।’

ডেঙ্গু রোগীর ব্যাপকতার কারণে হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মহানগরীর কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

অনলাইনে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সহযোগিতায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে থেকে অনলাইনে ডেঙ্গু রোগীদের ডাক্তাররা পরামর্শ দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গতকাল একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি যে, নিজে নিজের উদ্যোগে চিকিৎসা নিচ্ছে। এখানে সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এটা এত অপ্রতুল যে, আইনি সুবিধা পাচ্ছেন না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছিলো পরীক্ষার জন্য, সেটা কিন্তু তিনটা পরীক্ষা করতে হয়। ফলে ১৫০০ টাকা এমনি এসে যায়।’

বন্যা পরিস্থিতি
বন্যা-পরবর্তী দুর্গতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটির নেতৃত্বে ড্যাব দুর্গত এলাকায় ওষুধ-পত্র বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা দেবে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি জানান, কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে কৃষক দল ও এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা থাকবেন।

নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ড নিয়ে ইসির ব্যাখ্যা দাবি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ডের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। এটাকে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করেছে দুর্নীতির কারণে। এই বিষয়টা জাতির কাছে একেবারে অস্পষ্ট। এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনও কিছু জাতি জানে না।’এ সময় বিএনপির মহাসচিব নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছ থেকে একটা পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দাবি করেন।

বৈঠকে লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশ :আগস্ট ৪, ২০১৯ ১:৫৯ অপরাহ্ণ