সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পর মশানিধন কাজে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষকসহ নগরবাসীর মাধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তাদের দাবি, সিটি করপোরেশনের ওষুধের কার্যকারিতা নেই। এ কারণে ডেঙ্গুর মহামারি রূপ নিতে পারে।
ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনও দাবি করেন, ‘তাদের ব্যবহৃত ওষুধ শতভাগ অকার্যকর নয়। এর কিছু অংশ অকার্যকর। তবে, সেটিরও কার্যকারিতা রয়েছে। সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় সংস্থাটি আইইডিসিআরের কাছে পুনরায় ওষুধ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছেন। তাদের ফল পেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই ওই ওষুধ ব্যবহার করা হবে।’
সিটি করপোরেশনের ওষুধ সংগ্রহকারী দফতর ভাণ্ডার বিভাগের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে আইইডিসিআর তাদের ওষুধের নমুনার ওপর যে পরীক্ষা করতো, সেটি শুধু কিউলেক্স মশার ওপর ভিত্তি করেই করা হতো। এডিস মশার পরীক্ষা করা হতো না। সে কারণে এবার তারা ওষুধের পরীক্ষা এডিস মশার ওপর ভিত্তি করেই করতে চান। সংস্থাটির কাছে গত সপ্তাহের শেষের দিকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত তারা সিটি করপোরেশনকে পরীক্ষার ফল দিতে পারেনি।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের শেষের দিকে আমরা আইইডিসিআরের কাছে ওষুধ পাঠিয়েছি। তারা এখনও আমাদের ফল দেয়নি। সে কারণে ওষুধের গুণগত মান নিয়ে এখনও সন্দেহ কেটে উঠতে পারছি না। আমরা তাদের ফলের অপেক্ষায় আছি।
কী কারণে ফল পেতে দেরি হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইইডিসিআর প্রতিবছর কিউলেক্স মশার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন বা ফল দিয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর যেহেতু ডেঙ্গু রোগের প্রভাব বেশি। সে কারণে আমরা বলেছি এডিস মশার ফলও দিতে হবে। কিন্তু আইইডিসিআর আমাদের জানিয়েছে, তারা এডিশ মশা খুঁজে পাচ্ছে না। মশা সংগ্রহ করতে সময় লাগছে। এজন্য তারা আরও এক সপ্তাহ সময় চাইছে। প্রতিবেদন পাঠাতে পারছে না।
জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘আমরা আইইডিসিআরের কাছে নমুনা পাঠিয়েছি। তারা এখনও প্রতিবেদন দেননি।’
তবে ডিএসসিসির এই ওষুধ পরীক্ষার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের কাছে পাঠানো হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেন, ‘ওই দফতরের পরীক্ষায় তাদের ওষুধের গুণগত মান ভালো পাওয়া গেছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য একাধিকবার ফোন করলেও (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। বিষয়টি জানিয়ে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনও সাড়া দেননি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার চেয়ে কিউল্যাক্স মশার প্রাণশক্তি অনেক বেশি। যে ওষুধ কিউল্যাক্স মশায় সফল সেটি দিয়ে এডিস মশা মরবেই। তবে উচিত হবে দুই মশা নিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করা। এক্ষেত্রে দুই রকম ফল আসবে।’ তাতে সমস্যা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।