আরিফ সাওন : গত ২১ জুন একদিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৬ জন। এক মাসের ব্যবধানে তা প্রায় ছয় গুণ বেড়ে গেছে।
২২ জুলাই একদিনে সরকারি হিসেবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৩ জন। এর মধ্যে দুই জনের ডেঙ্গু হেমোরেজিক।
এর আগে ২১ জুলাই আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩১৬ জন। রোববার রাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান একজন সিভিল সার্জন। তার আগে এক নারী চিকিৎসকও ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গ একটু ভিন্ন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার মুল কারণ হলো জ্বর হলে অনেকে মনে করেন ভাইরাস জ্বর। ঘরে বসে থাকেন।
কেউ কেউ ভাবেন ৪-৫ দিনে এমনিই জ্বর কমে যাবে। এখানেই তারা ভুল করেন। অবহেলা করে বসে থাকেন। সময় মত রোগ নির্নয় ও চিকিৎসা হয় না। ফলে ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোমে গিয়ে রোগী মারা যায়।
তিনি বলেন, সাধারণত যে ধরনের লক্ষণ থাকার কথা অনেক ক্ষেত্রে তা দেখতে পাওয়া যায় না। ৪-৫ দিন জ্বর, প্রচন্ড তাপমাত্রা, গায়ে র্যাশ, মাথা ব্যাথা, চোখে ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যাথা, জ্বর কমার পর প্লাটিলেট কমবে, এরপর গিয়ে রক্তক্ষরণ হবে।
কিন্ত তা না হয়ে কিছু কিছু কেস পাওয়া যাচ্ছে- জ্বরের দুই একদিন পরে রোগী রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। জ্বরও তেমন বেশি হয় না। শরীরের কোথাও ব্যাথা হয় না। সিম্পল জ্বরের দুই-তিন দিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়।
অনেক ডাক্তারও যদি খেয়াল না রাখেন তাহলে তিনিও কিন্তু মিস করতে পারেন। যেহেতু ডেঙ্গর প্রকোপ এখন বেশি। তাই জ্বর হলেই ডাক্তার দেখিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। তাড়াতাড়ি সনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে। এতে ঝুঁকি কমে যাবে।
মাত্র দুটি পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে। সিবিসি করে প্লাটিলেট দেখলেই বোঝা যায়। প্লাটিলেট কমলেই বঝুতে হবে ডেঙ্গু।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর পরিমাণ শরবত, সালাইন অর্থাৎ তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। যাদের বমি হবে, খেতে পারবে না। তারা হাসপাতালে ভর্তি হলে আমরা তাদের শিরায় স্যালাইন দেই। আর যাদের রক্তক্ষরণ হয় তাদের ব্লাড দেয়া লাগতে পারে। তবে সবার বেলায় নয়।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এটা মশা বাহিত রোগ। বর্ষাকালেই হয়। এডিস মশার বৈশিষ্ট হলো যেখানেই পানি জমে সেখানেই ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে মশা নির্মুল করতে হবে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার সম্পর্কে তিনি বলেন, জ্বর কমার পর শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। নাকে রক্ত, দাঁতে রক্ত, চোখে রক্ত, চামড়ার নিচে রক্ত। পায়খানার সঙ্গেও রক্ত যেতে পারে। এটাকে আমরা বলি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। এটা ডেঞ্জারাস।
কিছু কিছু কেসে, রোগী হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায়। ব্লাড প্রেশার পাওয়া যায় না, পালস বোঝা যায় না। এটাকে বলে ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম। এটা খুবই ডেঞ্জারাস। এ রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। এর মধ্যে কয়েকজন যারা মারা গেছেন, তারা এই ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোমে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৭১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬৬৫ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৫০৯ জন।