২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:০৬

প্যারাগুয়ের সঙ্গে নাটকীয় ড্রয়ের পর ঝুলে রইল আর্জেন্টিনার ভাগ্য

খেলা ডেস্ক

কলম্বিয়ার কাছে হারের পর প্যারাগুয়ের বিপক্ষেও ঘুরে দাঁড়ানো হলো না আর্জেন্টিনার। নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচে আর্জেন্টিনা ড্র করেছে ১-১ গোলে। প্রথমে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন লিওনেল মেসি, ভিএআরের সাহায্যে পাওয়া স্পটকিক থেকে গোল করেছেন তিনি। এরপর আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আর্মানি পেনাল্টি সেভ করে বাঁচিয়েছেন দলকে। নইলে হেরেও বসতে পারত আর্জেন্টিনা। দুই ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে তাই কোপা আমেরিকায় কোনো মতে টিকে রইল আর্জেন্টিনার পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা। শেষ ম্যাচে কাতারকে হারাতেই হবে তাদের। এরপরও নিশ্চিত হবে না কোয়ার্টার ফাইনাল। নির্ভর করতে হবে অন্য ম্যাচের ফলের ওপর।

তিন গ্রুপের শীর্ষ দুইটি করে দলের সঙ্গে তৃতীয় হওয়া সেরা দুইদল উঠবে কোপার কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ ম্যাচে প্যারাগুয়ে কলম্বিয়ার কাছে হেরে গেলে আর আর্জেন্টিনা কাতারকে হারিয়ে দিলে রানার আপ হয়ে পরের রাউন্ডে উঠে যাবে মেসির দল। আর আর্জেন্টিনার মতো প্যারাগুয়েও শেষ ম্যাচে জিতে গেলে আর্জেন্টিনা হবে তৃতীয়। এরপর বাকি দুই গ্রুপের তৃতীয় হওয়া সেরা দুই দলের মধ্যে থাকলে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হবে আর্জেন্টিনার। ১ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত বি গ্রুপের তলানিতে আছে আগের দুইবারের রানার্স আপরা।

বেলো হরিজন্তেতে আরও একবার হতাশা সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টিনার। আগের ম্যাচ থেকে চারটি বদল এনেছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ। সার্জিও আগুয়েরো ও অ্যানহেল ডি মারিয়া বাদ পড়েছিলেন। মাঠে নেমেছিলেন, মিল্টন কাস্কো, রবার্তো পেরেরা, রদ্রিগো ডি পল ও লাউতারো মার্টিনেজ। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই কাজে আসেনি আর্জেন্টিনার। লিওনেল স্কালোনির দলের দিশেহারা রুপের কোনো পরিবির্তন আসেনি।

প্যারাগুয়ে প্রথমে নিজেদের অর্ধ থেকেই খেলেছে। কিন্তু এরপর সুযোগ বুঝে আঘাত করেছে আর্জেন্টিনার রক্ষণে। ২৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগও তাদের, ডেরলিন গঞ্জালেজ ডিবক্সের ভেতর ঢুকে ডানদিক থেকে শটে করেছিলেন গোলে। নিকোলাস টালিয়াফিকোর সময়মতো ব্লক বলের দিক পরিবির্তন করিয়ে দিলে বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেটা অল্প সময়ের জন্যই। মিনিট দশেক না পেরুতেই নিউক্যাসেল মিডফিল্ডার মিগুয়েল আলমিরন বল নিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দিলেন ভোঁ দৌড়, পেরেরা তার পিছু ছুটছিলেন। রাইটব্যাক কাস্কো ধারে কাছেও ছিলেন না। পেরেরা এক সময় হাল ছেড়ে দিলেন, কিন্তু আলমিরন বলটা গোললাইন পেরুতে দিলেন না। বাঁ পায়ে নিচু ক্রস করলেন ডান প্রান্ত থেকে। ডিবক্সের ভেতর গিয়ে পড়ল সেটা, পেছন থেকে দৌড়ে এসে রিচার্ড সানচেজ দারুণ এক ফিনিশে গোল করেন। ৩৭ মিনিটে প্যারাগুয়ে ১, শূন্য আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধ থেকেছে দর্শক হয়ে। ম্যাচ থেকে ছিটকেও যেতে পারত তারা। গোলরক্ষক আর্মানি বিপদ ডেকে এনেছিলেন আরেকটু হলেই। ডিবক্স থেকে বেরিয়ে প্রায় মিডফিল্ড পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। সেখানে বলের নিয়ন্ত্রণ প্রথম দফায় রাখতে পারেননি, পরেরবার গঞ্জালেজকে ফাউল করে বসলেন। ব্রাজিলিয়ান রেফারি উইলটন সাম্পাইও অবশ্য লাল কার্ড দেখালেন না আর্জেন্টাইন গোলরক্ষককে, আর্মানি বেঁচে গেলেন হলুদ কার্ড দেখে। বেঁচে গেল আর্জেন্টিনাও।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলি হিসেবে নেমে আগুয়েরো এরপর আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরাতে বড় অবদান রাখেন। রক্ষণ থেকে পাওয়া লং বল আগের ম্যাচেও কাজে দেয়নি আর্জেন্টিনার, এবারও দিচ্ছিল না। প্রথম ম্যাচেও তেমন কোনো গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষেও সেই অব্যাহত থাকল ৫৩ মিনিট পর্যন্ত।

আগুয়েরো ডিবক্সের ভেতর লং বল রিসিভ করে করলেন ক্রস। মার্টিনেজ ছিলেন সিক্স ইয়ার্ড বক্সের কাছাকাছি। দারুণ এক ফ্লিক করলেন তিনি, কিন্তু তার শট ফেরত আসলো বারপোস্টে লেগে। ফিরতি বলে মেসির দারুণ শট সেভ করেন প্যারাগুয়ে গোলরক্ষক রবার্তো ফার্নান্দেজ। মেসি যাচ্ছিলেন কর্নার কিক নিতে। কিন্তু ভিএআরের বদৌলতে একটু পর নিলেন পেনাল্টি কিক। মার্টিনেজের শট বারপোস্টে লাগার আগেই লেগেছিল প্যারাগুয়ে ডিফেন্ডার ইভান পিরিসের হাতে। প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় নিয়ে ব্রাজিলিয়ান রেফারি পরে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ফার্নান্দেজ মেসির পেনাল্টি ঠেকাতে ঠিক দিকেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন, কিন্তু মেসি ছিলেন আরও নিখুঁত।

প্যারাগুয়ের বিপক্ষে এই নিয়ে মেসির গোল দাঁড়িয়েছে ৫টি। একটা সরাসরি ফ্রি কিক থেকে, বাকি চারটাই পেনাল্টি এসেছে পেনাল্টি থেকে। কিন্তু মেসির গোলও অনুপ্রেরণার জন্য যথেষ্ট হলো না আর্জেন্টিনার। রক্ষণে ভুল করে বসলেন নিকোলাস অটামেন্ডি। ক্লাবের হয়ে এই মৌসুমে যে নিয়মিত খেলেননি সেই ছাপ রেখে গেলেন গঞ্জালেজকে ডিবক্সের ভেতর করা ট্যাকেলে। ৬১ মিনিটে তাই পেনাল্টি পেয়ে গেল প্যারাগুয়ে।

যে আর্মানি শেষ ১০ শটের ৮টিতেই আর্জেন্টিনার হয়ে গোল খেয়েছেন, একটু আগে যার পাগলামিতে দশ জনের দলে পরিণত হতে পারত আর্জেন্টিনা- সেই তিনিই এবার নায়ক বনে গেলেন। গঞ্জালের নিচু পেনাল্টি কিক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক সেভ করে আর্মানি বাঁচিয়ে রাখলেন আর্জেন্টিনার আশা।

আর্মানির দেওয়া পুজিতে ভর করে দুই মিনিট পর আরেকটু হলেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। মেসি- লো সেলসো দারুণ ওয়ান টু এর পর ক্রস করেছিলেন লো সেলসো বাম দিক থেকে। মার্টিনেজ লাফও দিয়েছিলেন, গোল থেকে কয়েক গজ দূরে থাকা অবস্থায়। কিন্তু তার হেড চলে যা বাইরে দিয়ে। ম্যাচে এরপর আর এমন সুযোগ আসেনি আর্জেন্টিনার কাছে। কাউন্টার অ্যাটাকে খেলতে থাকা প্যারাগুয়েও এরপর পুরোপুরি মন দেয় রক্ষণে। পরে নেমে অ্যানহেল ডি মারিয়া আরও একবার হতাশ করেছেন আর্জেন্টিনাকে।

অবশ্য এমন নাজেহাল এক পারফরম্যান্সের পর অন্তত একটি দিক দিয়ে কিছুটা তৃপ্তি খুঁজতে পারে আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে কখনই হারেনি তারা। সম্ভব সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে দুর্বলতম দল নিয়েও সেই রেকর্ডটা অন্তত অক্ষুণ্ণ রেখেছে তারা!

প্রকাশ :জুন ২০, ২০১৯ ১০:১২ পূর্বাহ্ণ