২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৩৯

ইয়াবা পাচারের নতুন ‘পথ’

দেশজনতা অনলাইন : মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান, বন্দুকযুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানিতেও বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার। বরং পাচারকারীরা নিত্যনূতন কৌশলে কারবার টিকিয়ে রাখার চেষ্টায়। ইদানীং ইয়াবার বেশ কিছু চালান ধরা পড়েছে যেখানে পাচারকারীরা লোক ভাড়া করে তাদেরকে ইয়াবা গিলিয়ে বা পায়ুপথ দিয়ে শরীরের ভেতরে রেখে পাচার করে নিয়ে এসেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পাচারে বাহক হিসেবে ব্যবহার করা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় চালান নিয়ে আসতে একেকটি ইয়াবা বড়ির জন্য পাঁচ টাকা করে দেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে বাড়ানো হয় টাকার পরিমাণ। তাই একেকটি চালানে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইয়াবা নিয়ে আসে তারা। আর এ ক্ষেত্রে জীবনটাকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিনেও কুণ্ঠাবোধ করছে না তারা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম  জানান, এই প্রক্রিয়ায় ইয়াবা পাচারে মৃত্যুও হতে পারে। কারণ, মানুষের পাকস্থলি খাবার হজমের জন্য যে রস থাকে, সেটি ইয়াবা বড়িকেও গলিয়ে ফেলতে পারে। কোনো কারণে একটু বেশি সময় পেটে থাকলেই এই ঝুঁকি তৈরি হয়। একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়।
আর পায়ু পথ দিয়ে ক্রমাগত এগুলো বের করতে থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে বলে বিশেষজ্ঞরা তাদের জানিয়েছেন বলে বলেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক সুদ্বীপ রঞ্জন দেবও জানিয়েছেন একই কথা। তিনি বলেন, ইয়াবা বড়ি পেটের ভেতর গলে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। আর যদি তা নাও গলে তাহলেও ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। মলমুত্র ত্যাগে সমস্যা হয়, মস্তিস্কেও প্রভাব ফেলে।

যেভাবে আনা হয়

একাধিক চালান ধরা পড়ার পর বাহকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন, বিশেষ কায়দায় প্রথমে স্কচটেপ পেঁচিয়ে ইয়াবার ছোট প্যাকেট করা হয়। পরে সেই প্যাকেট কলায় ঢুকানো হয়। আর সেই কলা না চিবিয়ে গিলে ফেলা হয়। আবার কিছু প্যাকেট পিচ্ছিল করে পায়ুপথ দিয়ে পেটে ঢুকানো হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই বহনে অনেকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চার হাজার ৫০টি ইয়াবা বড়ি। সবগুলো বড়ি পায়ুপথ ও পেটের মধ্যে বিশেষ কায়দায় রাজধানীতে আনা হয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ এই পদ্ধতিতে মাদক পরিবহনে তাদের দেওয়া হতো ১০ হাজার টাকা। অনেক সময় বড়িপ্রতি হিসাব করে পরিশোধ করা হতো।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, এই প্রক্রিয়ায় ইয়াবার চালান তথ্য ছাড়া ধরা কঠিন। কারণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই। এ জন্য বিশেষ এক ধরনের স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ার-বিন-কাশেম  বলেন, ‘এর আগেও অভিনব এমন চালান আমরা বেশ কয়েকটি ধরেছি। মঙ্গলবার রাতে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; এর মধ্যে একজনকে পেটে ইয়াবা আনার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটের তৎপরতা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।’

গত ২১ মে কক্সবাজারের টেকনাফে তিন নারীর পেটের ভেতর থেকে তিন হাজার ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। ওই নারীদের এক্স-রে করে কাল রঙের স্কচটেপ মোড়ানো অবস্থায় পেটের ভেতরে মাদকের বড়ি উদ্ধার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের চালান একসময় খুব আসত। এখন সেটা কমেছে। কারণ এটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ ধরনের কর্মকা- বন্ধে আমরা তৎপর রয়েছি। এরই মধ্যে স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে শুধু সোর্সে খবর বাদেও আমরা এ ধরনের মাদক চালান বন্ধ করতে পারব।’
র‌্যাবের আইন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘এ ধরনের চালান ধরা পড়ছে। তবে জীবনের মায়া তো সবারই আছে। এভাবে ইয়াবা বহনে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। যারা এগুলো বহন করে তারা জানে রাস্তাঘাটে যেকোনো জায়গায় তাদের স্ক্যানিং করা যাবে না। আর এসব অভিযান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই করা হয়।’

মৃত্যুর উদাহরণ

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এক নারীর লাশের ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে পেটের ভেতরে ৫৭টি প্যাকেটে ১৫০০ ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের সন্দেহ পাকস্থলিতে ইয়াবা পরিবহনের চেষ্টার কারণেই ওই নারীর মৃত্যু হতে পারে।
২৭ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত যুবকের ময়নাতদন্তের সময় তার শরীরে ১১ প্যাকেট ইয়াবা পাওয়া যায়। মাদক পরিবহনের কারণেও তার মৃত্যু হতে পারে।

প্রকাশ :জুন ১৬, ২০১৯ ২:৩০ অপরাহ্ণ